সৈকতে ঘুরে গান গেয়ে ঘর-টাকা দুটোই পেল জান্নাত

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে পর্যটকদের আনন্দ দিয়ে যে আয় হতো তাই দিয়ে চলত চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুরে জান্নাতের পরিবার। এক বোন, দুই ভাই, মা-বাবা নিয়ে পাঁচজনের সংসারের খরচ জোগানো সেই ছাত্রীকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি নুরে জান্নাতের পরিবারের হাতে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শহীন ইমরান।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ ঘোনার পাড়া এলাকার বসবাসকারী নুরে জান্নাতের বাবা মুহাম্মদ ইসলাম ছিলেন একজন দিনমজুর। মা গৃহিণী। কিন্তু ইসলামের পরিবার হঠাৎ এক অন্তহীন অমানিশা বন্দি হয়ে পড়ে। তিন বছর আগে দিনমজুরি কাজ করতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান। চলাফেরা করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে সৈকতে গান গেয়ে আয় করতে নেমে যায় নুরে জান্নাত। তবে রোজগারের জন্য সৈকতে ঘুরে ঘুরে গান করলেও পড়ালেখা বন্ধ করেনি জান্নাত।

গত ২৫ জানুয়ারি জান্নাতকে নিয়ে একটি বেসরকারি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করে। প্রতিবেদনটির সূত্র ধরেই মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে নুরে জান্নাতের পরিবারের হাতে পৌঁছে গেছে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শহীন ইমরান জানান, প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নুরে জান্নাতের মা সানজিদা আক্তারের অনুকূলে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র (তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র) করে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করে তাদের হাতে সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে নুরে জান্নাতের পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘরের কাজ শেষ হলে তারা সেখানে বসবাস শুরু করতে পারবে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা বলেন, এর আগে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তার পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা ও জান্নাতের পড়ালেখার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জান্নাত যাতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে সে জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জান্নাতকে কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি করা হয়েছে। যেখানে সে নিয়মিত গান শিখতে পারবে।

জান্নাতের মা সানজিদা ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পেয়ে আনন্দে আপ্লুত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কীভাবে কৃতজ্ঞতা জানাব ভাষা আমার জানা নেই। সব সময় একটা চিন্তা ছিল কীভাবে আমার মেয়ে ভালো স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি গানের চর্চা চালিয়ে যাবে। আল্লাহ আমার সে দোয়া কবুল করেছেন।

বাবা মুহাম্মদ ইসলাম বলেন, টেলিভিশনের একটি সংবাদের মাধ্যমে আমার মেয়ের জীবন পরিবর্তন হতে চলেছে। আমরা জীবনেও কল্পনা করিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এতো বড় উপহার পাব। তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মহোদয়, ইউএনও ও টেলিভিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

অনুভূতি প্রকাশ করে জান্নাত বলেন, এখন পড়ালেখা ও গানের চর্চা চালিয়ে যেতে পারব। আমি যেন ভালো শিল্পী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলে দেশের সুনাম ছড়িয়ে দিতে পারি সে জন্য সবাই দোয়া করবেন।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top