চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, কারফিউ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সেনারা বেসামরিক লোকদের ওপর সেনারা আর গুলি ছুড়বে না।
বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন দুজনের বরাতে বুধবার (৭ আগস্ট) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বৈঠকে জেনারেলরা এ কথা বলার পরপরই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান ছুটে যান গণভবনে। তিনি শেখ হাসিনাকে এই বার্তা দেন যে, তিনি যে কারফিউ ডেকেছেন তা বাস্তবায়নে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন সেনারা।
ভারতীয় একজন কর্মকর্তাও এ তথ্য জানিয়েছেন। এতেই পরিষ্কার হয়ে যায় শেখ হাসিনার পক্ষে সেনাবাহিনীর আর কোনো সমর্থন নেই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদের কর্মকর্তাদের অনলাইন মিটিং এবং তারপর শেখ হাসিনাকে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে এর আগে আর কোনো রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। শেখ হাসিনা ১৫ বছর যেভাবে শাসন করেছেন তাও উঠে আসে। তিনি বিন্দুমাত্র ভিন্নমত পোষাণ করেন এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এসবের কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আর আকস্মিকভাবে সোমবার তার ইতি ঘটে। তিনি পালিয়ে যান ভারতে।
এর আগে দেশজুড়ে কারফিউ দেয়া হয়। তাতে গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে কমপক্ষে ৯১ জন নিহত ও কয়েক শত মানুষ আহত হন। জুলাইয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরুর পর এটাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণহানির দিন।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রোববার সন্ধ্যার আলোচনার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এটা ছিল নিয়মিত মিটিং। সেখানে আপডেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে বাড়তি প্রশ্ন করা হলে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রয়টার্স শেখ হাসিনার শাসনের শেষ ৪৮ ঘণ্টার পরিস্থিতি বোঝার জন্য গত সপ্তাহের ঘটনাবলি সম্পর্কে অবগত চারজন সেনা কর্মকর্তা এবং এসব ঘটনা কাছ থেকে দেখেছেন এমন দুটি সূত্রসহ ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে তাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।
শেখ হাসিনা গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছেন। জানুয়ারিতে তিনি টানা চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় আসেন। এর আগে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেন। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে। তিনি কঠোর হস্তে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালতের এক রায়কে কেন্দ্র করে তার সেই ক্ষমতা চ্যালেঞ্জে পড়ে। ছাত্রদের আন্দোলনে সেই রায় পরে সংশোধন করা হয়। কিন্তু প্রতিবাদ বিক্ষোভ রূপ নেয় শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে।
তবে শেখ হাসিনার নিয়োগ দেওয়া সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে জানাননি। কিন্তু প্রতিবাদ বিক্ষোভের আকার এবং কমপক্ষে ২৪১ জনের মৃত্যু শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে অসম্ভব করে তোলে। এমনটা বলেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা।
চাটগাঁ নিউজ /এআইকে