নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পরকীয়া প্রেমিকের সহযোগিতায় স্বামীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে স্ত্রী রুমানা আক্তার রুমি (১৯)।
রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাইছড়ি ইউনিয়নের গামারীতলা গ্রামে ছুরিকাঘাতে নিহত হোন আলমগীর। জানা যায় পরকীয়ার জেড় ধরে তার নিজের স্ত্রী ও স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক মিলে আলমগীরকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। এই ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে সীতাকুণ্ড মডেল থানা পুলিশ।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিন চাটগাঁ নিউজ কে জানান, এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে আমরা কোনো কূল কিনারা পাচ্ছিলাম না। তারপরও আমাদের পেশাগত দক্ষতা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে অবশেষে আমরা এই ঘটনার খুনিদের সনাক্ত করেছি।
এই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, খুনি আলমগীরের স্ত্রী রুমির বাড়ি হলো কুমিরায়। আলমগীরের সাথে বিয়ে হওয়ার আগে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো তার। কিন্তু সে তার পরিবারকে কোনোদিন তার পছন্দের কথা জানায়নি। পরবর্তীতে ঐ মেয়েটা যখন এস.এস.সি তে ফেল করলো তার পরিবার তাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিলো এবং আলমগীরকে তারা পাত্র হিসেবে বেছে নিলো। বিয়ের পর মেয়েটা আলমগীরকে স্বামী হিসেবে একদমই মেনে নিতে পারছিলো না। সে প্রায় তার পূর্বের প্রেমিক (তদন্ত সাপেক্ষে নাম অপ্রকাশিত) এর সাথে সম্পর্ক করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। আলমগীরকে সে প্রেশার দিচ্ছিলো তাকে একটা এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দেওয়ার জন্য। আলমগীর তাকে ফোন কিনে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে তার বোনের অনুরোধে অবশেষে রুমানাকে একটা ফোন কিনে দেন। ফোন হাতে পেয়ে সে পুনরায় আবার তার পুরনো প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। তারা তখন ফোনে কথা বলা চালিয়ে যাচ্ছিলো এমনকি আলমগীর দোকানে থাকা অবস্থায় রুমানার পুরনো প্রেমিক তার বাড়িতে এসে দেখা করতো। সেই সাথে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপেও লিপ্ত হতো তারা। পরবর্তীতে ঐ ছেলে রুমানার প্রতি এডিক্টেড হয়ে পড়লে আলমগীর কে ছেড়ে তার কাছে চলে আসার প্রেশার দিচ্ছিলো। তখন রুমানা তাকে বলে যে তোমাকে আলমগীরকে এই দুনিয়া থেকে বিদায় করতে হবে। এই মর্মে তারা দুইজনেই সিদ্ধান্ত নেই আলমগীরকে মেরে ফেলার।
ঐ সময় ওসি কামাল আরো জানায়, ২৪ তারিখের আগেই সকালে পরকীয়া প্রেমিক রুমানাকে জানায় আজকেই তোমার স্বামীকে দুনিয়া থেকে বিদায় দিবো। তখন রুমানা তার কথায় বলে যে, ঠিক আছে এটা করতে পারলে আমি তোমার সাথে চলে আসবো। পরবর্তীতে তারা সেই প্ল্যান অনুযায়ী তিন দিন আগে থেকে তাকে বেশ কয়েকবার মেরে ফেলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। কিন্তু তখন সু্যোগ না পেয়ে অবশেষে ২৪ তারিখ তারা যেখানে লাশটা পাওয়া যায়, সেখানে ওৎ পেতে ছিলো। আলমগীর যখন দোকান থেকে বের হই তখন খুনির আরেক সহযোগীর খবর পেয়ে ঐ স্থলেই তাকে চুরিখাঘাতে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পরেই পরকীয়া প্রেমিক রুমানাকে বলে যে, তোমার স্বামীকে আমরা হত্যা করে ফেলছি। তুমি এবার কাপড়-চোপর নিয়ে চলে আসো। পরবর্তীতে ঘটনা শুনে পুলিশ যাওয়ার পর মেয়েটা আর যেতে পারেনা। আমাদের পুলিশের হেফাজতে চলে আছে।
অবশেষে ওসি সীতাকুণ্ডবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই ঘটনাটি একটি নৃশংস ঘটনা। আপনাদের মাধ্যমে আমি সকল সীতাকুণ্ড বাসীকে জানাবো তারা যাতে এই বিষয়টা নিয়ে সচেতন থাকে। বিশেষ করে সকলের স্ত্রীদের প্রতি সতর্ক অবস্থানে থাকার আহ্বান জানাবো। আপনারা এই নিউজটা প্রচার করবেন যাতে করে অন্তত সীতাকুণ্ডে এরকম পরকীয়ার কারনে এরকম নিরীহ কেউ হত্যাকাণ্ডের স্বীকার না হয়।