সিপ্লাসটিভিতে সংবাদের জের: অবশেষে দেশে এলো রাশেদুলের মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে দেশে পৌঁছেছে সৌদি আরবের রিয়াদে অগ্নিকাণ্ডে নিহত পটিয়ার প্রবাসী রাশেদুল ইসলামের মরদেহ। গতকাল শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শনিবার সরকারের পক্ষ থেকে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর পর পটিয়ার কচুয়াই জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে রাশেদুলের জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি সিপ্লাসটিভি ও চাটগাঁ নিউজে “ভারতীয় দুই লাশ ক্ষতিপূরণ নিয়ে দেশে ফিরলেও বাংলাদেশি লাশের খবর নেই!” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

প্রবাসী রাশেদুলের মত লাখো বাঙালি একটু সুখের খোঁজে, একটু স্বপ্ন পূরণের আশায় শত কষ্টকে বুকে সয়ে দূর প্রবাসে পাড়ি জমান। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে সমৃদ্ধ করেন দেশের রেমিট্যান্স খাতকে। মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র, পরিবার-পরিজনের মুখে ফোটায় সুখের হাসি। কিন্তু মোমবাতির মত নিজে জ্বলে পরিবার, দেশকে আলোকিত করা এ রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রবাস জীবন কাটে নিতান্ত অবহেলা আর প্রবঞ্চনায়। সৌদিআরব বা মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা তুলনামূলক মর্যাদাপূর্ণ কর্মজীবন কাটালেও বাংলাদেশিদের এখনো ইঁদুর কপালে ভাগ্য!হতভাগ্য প্রবাসী রাশেদুল ইসলামই এর সর্বশেষ উদাহরণ।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের রিয়াদে আল বাজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত রাশেদুলসহ আরও দুই ভারতীয় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। কিন্তু আরবাবের (চাকরিদাতা) প্রচেষ্টায় নির্ধারিত সময়ে দুই ভারতীয়ের মরদেহ দেশে পৌঁছায়। কিন্তু মৃত্যুর পর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও হতভাগ্য রাশেদুলের মরদেহ দেশে ফিরে না। তাকে নিয়ে শুরু হয় আরবাবের নানা গড়িমসি। প্রাপ্য বেতন-ভাতাদি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আরবাব পক্ষ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে সৌদিতে রাশেদুলকে দাফন করানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ নিহতের পরিবারের।

সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে এ বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টেতে আনতে নিহতের স্বজনেরা সিপ্লাসটিভি ও চাটগাঁনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে হাজির হন। মানবিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সিপ্লাসটিভিতে ভিডিও ও চাটগাঁ নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রচার করা হয়। এরপর গতকাল ২২ ফেব্রুয়ারি দেশে পৌঁছায় রাশেদুল ইসলামের মরদেহ।

রাশেদুল ইসলামের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি পটিয়ার কচুয়াই ইউনিয়নে পৌঁছালে এলাকা জুড়ে শোকের মাতম নেমে আসে। হতভাগ্য রাশেদুলকে শেষবারের মত একপলক দেখতে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন।

প্রিয় সন্তানের নিথর নিস্তব্ধ মুখ দেখে পাগলপ্রায় রাশেদুলের মা ফরিদা বেগম। তাঁর বুক চাপড়ানো হৃদয় বিদারী কান্নায় প্রকম্পিত হয়ে উঠছে আকাশ বাতাস। ‘অ পুত তুই কডে, তুই হইয়ুসদে নয়না আঁর নিঃশ্বাস-বিশ্বাস। নিঃশ্বাস বিশ্বাস হডে অ পুত। তোরে ত জান্নাতবাসী গরিলু আল্লায়’।

জানাযায় রাশেদুল ইসলামের পিতা মো. জাকির হোসেন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আল্লাহর দরবারে অপু (সিপ্লাসটিভি ও চাটগাঁ নিউজ সম্পাদক) ভাইয়ের জন্য শুকরিয়া জানাই। তিনি অনেক কষ্ট করেছেন আমার ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্য। আমার ছেলের কাছে কারো যদি কোনো পাওনা থাকে আমাকে বলবেন। কোনো দোষ-ত্রুটি থাকলে আল্লাহর ওয়াস্তে ক্ষমা করে দিবেন।

রাশেদুল ইসলামের বোনের স্বামী মো. নুরুল আজিম বলেন, সিপ্লাসটিভি ও চাটগাঁ নিউজে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। এর মধ্য দিয়ে রাশেদুলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া গতিশীল হয়। তাছাড়া অপু ভাই নিজেও স্বপ্রণোদিত হয়ে সৌদি আরবের বাঙালি প্রবাসী নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

সৌদি আরবের রিয়াদে আল বাজ নামের একটি কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন চট্টগ্রামের পটিয়ার ছেলে রাশেদুল ইসলাম। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম মৃত্যু হয় রাশেদুলের।

রাশেদুল ইসলামের বাড়ি পটিয়া কচুয়াই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে। গত ৩ বছর আগে তিনি সৌদি আরব যান। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরে তার দেশে ফেরার কথা ছিল। ঘর বাঁধার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস প্রিয় জন্মভূমিতে ফেরার আগে না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাশেদুল ইসলাম।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top