চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: সিন্ডিকেটে দল পাল্টেছে, কিন্তু সিন্ডিকেটবাজির ভোল পাল্টেনি। আগে সিন্ডিকেটের সদস্য ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের এসময়ে এখন তাদের জায়গায় এসেছে অন্যদলের সদস্যরা।মূলত সিন্ডিকেটের কারসাজি অপরিবর্তনীয় রয়েছে।তাই চাল,ডাল,চিনি, মাছ,মুরগী,শাকসবজিসহ সকল ভোগ্য পণ্যের দাম কমে গেলেও বাজারে তার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।ভোক্তাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে বর্তমান সরকারের কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সরকার সিন্ডিকেটের টিকিও খুঁজে পাচ্ছে না।
বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ভারত,থাইল্যান্ডসহ বিশ্ব বাজারে চাল,চিনির দাম কমেছে। ভারত চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করায় চালের দাম কমেছে। একই সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায়ও চালের দাম কমছে। অথচ বাংলাদেশে চালের দাম আরও বেড়ে গেছে। একদিকে বিশ্ববাজারে চালের দাম কম তারওপর বর্তমানে দেশে আমনের ভরা মৌসুম। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে বেড়েই চলেছে চালের দাম। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে সব ধরণের চালের দাম বস্তা প্রতি (২৫ কেজি) ৩০০/৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে বিশ্ব বাজারে মৎস্য ও পোল্ট্রি খাদ্যের দামও কমেছে। তবে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ডিম, মুরগী ও মাছের দামও বৃদ্ধির তালিকায়। এখনো ডিমের (ফার্ম) ডজন বাজারে ১৪০ টাকা। কিছুদিন আগে ডিমের ডজন রীতিমত ১৮০/১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে ফার্মের মুরগির কেজি চলছে ১৯০/২১০ টাকা। শুধু চাল বা চিনিই নয় আসন্ন রমজান মাসকে টার্গেট করে সকল খাদ্যপণ্যের দামও বেড়ে চলেছে।
শুধু চাল,চিনি,মাছ,মুরগী নয়, সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে শাক-সবজি নিয়েও চলছে গলাকাটা ব্যবসা। চট্টগ্রামের শঙ্খচরে মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা কেজি দরে। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা কেজি দরে। অথচ নগরে মূলা বা ফুলকপির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, ৩০/৩৫ টাকা কেজি বাজার মূল্যের সবজি প্রান্তিক পর্যায়ে ৩/৫ টাকা মূল্য নির্ধারণের নেপথ্যে রয়েছে সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট কারসাজি করে তৃণমূল সবজি বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এতে করে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। আবার নামমাত্র মূল্যে কিনে পর্যাপ্ত মূল্যে বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠছে সিন্ডিকেট।
সিন্ডিকেটে দল পাল্টেছে, কিন্তু ভোল পাল্টায়নি- এমনটি স্বীকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও। সম্প্রতি দেয়া এক ভাষণে এ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজার,পরিবহনসহ সবখানে এখনো সেই চাঁদাবাজি চলছে। আওয়ামী লীগের জায়গায় অন্যান্য দল এসেছে। এই চাঁদাবাজির কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা নেয়া হচ্ছে না। পুলিশ এখনো নিষ্ক্রিয়। তারা সেই পুরানো পথেই হাঁটছে। এসব বিষয় নিয়ে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। রাজধানীর খামার বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাজারের সিন্ডিকেট এখনো আছে। হাত বদলের মাধ্যমে দাম বাড়ছে, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তা নিয়ন্ত্রণের। কিন্তু তাদের এ চেষ্টা কার্যত নিষ্ফল বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আর এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। একটি সফল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর মানুষের মনে যে প্রত্যাশার জন্ম নিয়েছিল তা এখন হতাশায় পর্যবসিত হচ্ছে। চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্যর ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে মানুষের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। এর থেকে যেন কিছুতেই মুক্তি মিলছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৫৮ জন কর্মকর্তার নেতৃত্বে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় দেশের সকল উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অভিযান চলছে। এ কার্যক্রমে বাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও সিন্ডিকেটের টিকি খুঁজে পাচ্ছে না সরকার।
প্রতিযোগিতা কমিশনের তথ্য মতে, সাধারণ চাল ও কর্পোরেট চালে ২০টি, ভোজ্য তেলে ৯টি, ডিম নিয়ে কারসাজি করায় ১৭টি, মুরগী সিন্ডিকেট ৯টি, পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একটিসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ১২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষ অনেক কষ্টে আছে। অনেকে কম খেয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু নানা সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে তারা মাঝখান থেকে দাম বাড়িয়ে মুনাফা করছে বিভিন্ন পণ্যে। এখানে উৎপাদকরা তেমন কিছু পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে না।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি