সিডিএর জমি দেখিয়ে এস আলমের ৭০০ কোটি টাকার ঋণ, অভিযানে দুদক

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার সরকারি খেলার মাঠ দখল ও দোকান বরাদ্দের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুদকের চট্টগ্রাম-১ কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে। নেতৃত্ব দেন উপসহকারী পরিচালক হামিদ রেজা।

অভিযোগ ছিল, আগ্রাবাদের ‘বালুরমাঠ’ নামে পরিচিত সরকারি খেলার মাঠের একটি অংশ স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে। দোকান নির্মাণ ও বরাদ্দে সিডিএর কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

তবে দীর্ঘ অভিযানে মাঠ দখল বা দোকান নির্মাণের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পায়নি দুদক দল।

কিন্তু তদন্তে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য— একই এলাকায় ১০১ কাঠা জমি লিজ নিয়ে এস আলম গ্রুপের দু’টি প্রতিষ্ঠান ‘আবাসিক প্রকল্প’ নির্মাণের নামে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় মেসার্স মডার্ন প্রপার্টিজ লিমিটেড ও মেসার্স হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে ১০১ দশমিক ৮৭ কাঠা জমি বরাদ্দ দিয়েছিল দুদক। বরাদ্দের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল ইজারার শর্তে।

বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হাসান এবং চেয়ারম্যান আহসানুল আলম। হাসান এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদের ভাই ও আহসানুল আলম ছেলে।

দুদক কর্মকর্তা হামিদ রেজা বলেন, ‘আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার ১০১ কাঠা জমি এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান ২০০১ ও ২০০৫ সালে ৯৯ বছরের জন্য সিডিএ থেকে লিজ নেয়। চুক্তি অনুযায়ী আবাসিক ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও ২০ বছরেও সেখানে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি।’

তিনি জানান, ওই জমি দেখিয়ে এস আলম গ্রুপ ২০২০ সালে চৌমুহনী জনতা ব্যাংক শাখা থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ঋণ নেয়। পরে অন্যান্য সম্পত্তিও জামানত হিসেবে দেখানো হয়। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এস আলম গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা।

দুদক সূত্র বলছে, আবাসন প্রকল্পের নামে নেওয়া এই লিজ ও ঋণপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও ভুয়া তথ্য প্রদানের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য সিডিএ, ব্যাংক ও ভূমি অফিসের রেকর্ড পরীক্ষা করছে কমিশন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে ‘বালুরমাঠ’ ছিল শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গা। এখন মাঠের চারপাশে দোকান, গ্যারেজ ও গুদাম গড়ে উঠেছে। আবাসিক এলাকার খেলার মাঠ দখলের ঘটনায় সিডিএর কয়েকজন কর্মকর্তার নামও ঘুরছে আলোচনা-সমালোচনায়।

একজন স্থানীয় বলেন, ‘আগে এখানে বাচ্চারা খেলত। এখন দোকান আর গুদাম। শুনছি এই জায়গা দেখিয়ে আবার ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়েছে— এটা ভয়াবহ।’

দুদকের চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, সম্প্রতি সিডিএর বরাদ্দ দেওয়া ওই জায়গা পরিদর্শনে গিয়ে দুদকের টিম সেখানে চৌধুরী সুপার শপ ও রয়েল অটোকার নামে দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখতে পায়। অথচ সিডিএর নথিপত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব উল্লেখ করা হয়নি। জমি যাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তারা শর্ত লঙ্ঘন করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সেটি ভাড়া দিয়েছে। কিন্তু সিডিএ বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

অভিযান শেষে দুদকের উপ সহকারী পরিচালক হামেদ রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বরাদ্দের শর্ত লঙ্ঘন করলেও ইজারাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সিডিএ। এতে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব অবহেলা রয়েছে। আবার ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেড সেখানে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে। এখানে সিডিএ’র কোন কর্মকর্তার দায় রয়েছে কিনা তা নিরূপণ করে দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top