সিএমপির পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসান ও স্ত্রীর সকল সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোহাম্মদ কামরুল হাসান এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে সকল সম্পত্তির দলিল, ফ্ল্যাট ও কোম্পানির আংশিক শেয়ারসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজ ড. জিয়াবুন্নেছার আদালত এ নির্দেশ দেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত ১১ কোটি ৩৪লাখ ৩৫হাজার ৯১৯ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দূর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রামের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, মোহাম্মদ কামরুল হাসান এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগম বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৩৪লাখ ৩৫হাজার ৯১৯ টাকার আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে তাদের এই সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদক, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক এমরান হোসেন।

নগর পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় দায়িত্ব পালনকালে ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।

কামরুল হাসান এর আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) এর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার মীরওয়ারিশপুর গ্রামের বাসিন্দা মরহুম মোহাম্মদ গোলাম কবিরের সন্তান। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পশ্চিম নাছিরাবাদ এলাকার বাচামিয়া রোড়ে স্ত্রী সহ বসবাস করেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ১৯৮৯ সালে সাব-ইন্সপেক্টর পদে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। চাকুরীর ধারাবাহিকতায় পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) হিসেবে সিএমপি, চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন। অনুসন্ধানকালে অভিযোগ মোহাম্মদ কামরুল হাসান এর নামে ১২ কোটি ৭২লাখ ৯২হাজার ৬৯৫ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১কোটি ২৩লাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৩ কোটি ৯৬লাখ ৩১হাজার ৯১১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া, একই সময়ে তার মোট ৭০ লাখ ২৮হাজার ২৪১ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়।

উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪ কোটি ৮০লাখ ৩২ হাজার ৮৭ টাকা। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস ৯ কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ টাকা কম পাওয়া যায়। তার নামে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

একইভাবে তার স্ত্রী সায়মা বেগম এর নামে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ২৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২ কোটি ৫৩হাজার ২৪০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪০লাখ ১৪ হাজার ৪৩৩ টাকা। তার নামে ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় মোহাম্মদ কামরুল হাসান এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগম বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অবরুদ্ধ (Freeze)/ ক্রোক (Attachment) করার জন্য আদালতে আবেদন দাখিল করে।

চাটগাঁ নিউজ/এআইকে/এসআইএস

Scroll to Top