আনোয়ারা প্রতিনিধি : চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) উৎপাদন বন্ধ ২১৯ দিন। এতে ৭৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকার ইউরিয়া সার উৎপাদনের সম্ভব হয়নি৷এছাড়া দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
সিইউএফএল সূত্র জানায়, যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সংকটের কারণে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। একই কারণে গত বছরেও ১০ মাস কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। ইতিমধ্যে কারখানার জন্য আমেরিকা থেকে ৫ কোটি টাকার ২৮টি স্পেয়ার পার্টস ক্রয় করে কারখানায় লাগানো হয়েছে। এছাড়া সার রাখার গুদাম দ্রুত মেরামত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন এ কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়। ইউরিয়া সারের বাইরে এই কারখানায় দৈনিক ৭০০ টন অ্যামোনিয়াও উৎপাদিত হয়। কারখানার উৎপাদিত এসব সার ২৫টির মতো জেলার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দেওয়া হয়। বিসিআইসির ডিলারদের মাধ্যমে প্রতি টন ইউরিয়া সার ২৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়। সে হিসাবে ইউরিয়া সার থেকে প্রতিদিন আয় হয় পৌনে তিন কোটি টাকা। আর প্রতি টন অ্যামোনিয়া ৫৪ হাজার টাকা করে মোট ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার দৈনিক অ্যামোনিয়া উৎপাদন হয়। এই হিসাবে দিনে ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার ইউরিয়া সার ও অ্যামোনিয়া উৎপাদিত হয়। গতকাল সোমবার পর্যন্ত (১৬ সেপ্টেম্বর) ২১৯ দিন কারখানাটি বন্ধ থাকায় মোট ৭৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকার ইউরিয়া সার ও ৬৫৭ কোটি টাকার অ্যামোনিয়া উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি।
সিইউএফএল দীর্ঘ সময় বন্ধের কারণে সার উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জানিয়েছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ আছে কারখানা। একটা কারখানা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে শুধু উৎপাদন বন্ধ থাকা নয়, এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর একটা মানসিক চাপও পড়ছে। কারখানার যন্ত্র সচল থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন ভালো থাকে। এখন বন্ধ থাকায় সুনসান নীরবতায় যান্ত্রিক কোনো শব্দ নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যস্ততাও নেই।
কারখানাটির একাধিক শ্রমিক কর্মচারীরা জানান, কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখা মানে, এমডির হরিলুটের অন্যতম কৌশল। যেখানে যেটা প্রয়োজন নেই সেটা ইমার্জেন্সি কাজ দেখিয়ে অর্থ লুট করা হয়৷ যত কাজ দেখানো যায়, ততো অর্থ এমডির পকেটে যায়। বর্তমান উৎপাদন বন্ধ রেখে কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রপাতির উপরে রং সহ বিভিন্ন কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব কাজের প্রয়োজন নেই। এতে সরকারের হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার পাশাপাশি কারখানার অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পরে এসব মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষের কোটি টাকা খরচ হবে।
এদিকে কারখানা ও কলোনির বিভিন্ন কাজ তার পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে করার অভিযোগও রয়েছে। অন্যদিকে কারখানায় প্রতিদিন ইউরিয়া সার উৎপাদন হয় ১২শ টন। তার মধ্যে প্রতিদিন দুইশ টন ইউরিয়া প্যাকেট করা হয়৷ বাকীগুলো গুদামে রাখা হয়। অথচ সেই গুরুত্বপূর্ণ গুদামটি আড়াই বছরেরও বেশি সময় খোলা রাখা হয়েছে। গুদামটির ছাদের কিছু কিছু অংশে সৃষ্ট ছিদ্র মেরামত করার সুযোগ থাকলেও পুরো ছাদ মেরামতের জন্য বরাদ্দ নেন এমডি। গুদামের কাজ এখনো সম্পূর্ণ না হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান বলেন, নিজের ইচ্ছায় উৎপাদন বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। গ্যাস না থাকা ও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য উৎপাদনে যাওয়া যাচ্ছে না। অহেতুক কাজ করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজের বিল পাশ করানো হয়। এতে কোনো কারচুপি করার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, কারখানার গুদামটি অকেজো হওয়ায় টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করানো হচ্ছে। কিন্তু উন্নতমানের যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করানোর জন্য ঠিকাদারের সময় লাগতেছে। তবে গুদামের তেমন প্রয়োজন নেই। সার উৎপাদনের সাথে সাথে বেল্টের মাধ্যমে প্যাকেট প্রক্রিয়া স্থানে প্যাকেট করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারীর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানাটি বন্ধ হওয়ার পর পর জরুরি যন্ত্রপাতিগুলোর ব্যবস্থা করা হলে অনেক আগে উৎপাদন শুরু করা যেতো। উৎপাদনে জরুরি যন্ত্রপাতি না কিনে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো চলমান রেখেছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এদিকে আবার গ্যাসের অযুহাত দেওয়া হচ্ছে। অথচ পাশের ডিএপি সার কারখানা ও কাফকোতে গ্যাস দিয়ে উৎপাদন চালু রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমডি জানান, বর্তমান গ্যাস সংকটে উৎপাদনে যেতে পারছিনা। গ্যাসের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। গ্যাস পাওয়ার সাথে সাথে উৎপাদনে যাব।
পার্শ্ববর্তী অন্য কারখানায় গ্যাস দিয়ে উৎপাদন চললেও সিইউএফএলে গ্যাস না থাকার বিষয়ে এমডি জানান, সিইউএফএলের উৎপাদনের জন্য গ্যাস অন্য ক্যাটাগরিতে। আর তাদের জন্য বরাদ্দ হলেও আমাদেরকে দেইনি সরকার। বর্তমান দেশের পরিস্থিতির জন্য একটু বিলম্ব হচ্ছে। দেশে গ্যাসের সংকট রয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/সাজ্জাদ/এসএ