নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা কাজীর দেউড়ি শিশু পার্কের উচ্ছেদকৃত জায়গায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদ ও শিশু-কিশোরদের অনুশীলনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিজয় মেলার ভেন্যু আউটার স্টেডিয়াম থেকে স্থানান্তর করে সিআরবি শিরিষ তলায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
তবে সিআরবি শিরিষ তলার পাহাড়ি কাঠামোর কারণে দর্শনার্থীদের যাতায়াত সমস্যার কথা বিবেচনা করে সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুকী আজম বীর প্রতীকের নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা কাজীর দেউড়ি শিশু পার্কের উচ্ছেদকৃত খালি জায়গাটিতে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের সচিব আহমেদ নেওয়াজ চাটগাঁ নিউজকে জানান, সিআরবি শিরিষ তলার মাঠটি চারিদিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত। ভৌগলিকগত অবস্থানের কারণে এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হলে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হবে। এত বড় একটি মেলা সিআরবি’র মত জায়গায় অনুষ্ঠিত করা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। মেলা নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর আবদারের বিষয়টি অবগত করলে সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুকী আজম বীর প্রতীক মহোদয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে শিশু পার্কের উচ্ছেদকৃত খালি জায়গাটি নিয়ে দিয়েছেন। মেলার সম্পূর্ণ আয়োজক জেলা প্রশাসন। আমরা শুধু সহযোগিতার দায়িত্বে থাকব।
মেলার স্থায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে ১১ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহ ব্যাপী মেলা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে দর্শনার্থীদের চাপ থাকলে সেক্ষেত্রে মেলার স্থায়িত্ব নিয়ে জেলা প্রশাসন চিন্তা ভাবনা করবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাজীর দেউড়ি শিশু পার্ক উচ্ছেদ করার কারণে সেখানে পুরো এলাকাটি জুড়ে কংক্রিট, ইট-পাথরের জঞ্জালে পূর্ণ হয়ে আছে। জনসাধারণ নিশ্চিন্তে চলাফেরার মত অবস্থা নেই। জায়গাটিতে যাতায়াতা সুবিধা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পে লোডার দিয়ে কংক্রিট, পাথর সরানোর কাজ চলছে। হাতে রয়েছে আর মাত্র সপ্তাহ খানেক সময়। এই সীমিত সময়ের মধ্যে শিশু পার্কের জায়গাটিকে মেলার উপযোগী করতে দ্রুততার সাথে চলছে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার ভেন্যু এই পর্যন্ত তৃতীয় দফায় পরিবর্তন করা হচ্ছে। আউটার স্টেডিয়াম পরিবর্তন করা হয়েছে ক্রীড়ানুশীলনের কারণে। সিআরবি শিরিষ তলা পরিবর্তন হয়েছে স্থান স্বল্পতা ও ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে। তবে তৃতীয় দফায় নির্ধারিত হওয়া কাজীর দেউড়ি শিশু পার্কের উচ্ছেদকৃত খালি জায়গার ভেন্যু কি আবার পরিবর্তন হবে?- এমন প্রশ্নও উঠেছে চট্টগ্রামবাসীর মনে।
এই প্রশ্নের জবাবে আহমেদ নেওয়াজ বলেন, এবার আর পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মেলা অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তন হতে পারে। তবে স্থান পরিবর্তন হবে না। স্থান পরিবর্তনের আর সময় নেই।
বিজয় মেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এবার মেলায় জুলাই বিপ্লবকে সামনে রেখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্পূর্ণ ইতিহাসকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৮৯-৯০ সালের স্বৈরাচার পতন, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই বিপ্লবকে মেলার প্রতিপাদ্য করা হবে। এবারের মেলার থিম হবে- ‘চলো দূর্জয় প্রাণের আনন্দে’। এবারের মেলায় কোন আমদানি পণ্যের পসরা নয়, থাকবে দেশীয় হস্তশিল্পের প্রাধান্য। এবার নারী উদ্যোক্তাদেরকে সমন্বিত করা হবে। মেলা চলাকালীন বিজয় মঞ্চে প্রতিবারের মত আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের চিত্রাংকন, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে ‘চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে’ স্লোগানে চট্টগ্রামে অরাজনৈতিক উদ্যোগে শুরু হয়েছিল প্রথম মু্ক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ও অধ্যাপক আবদুল মান্নান ছিলেন এ মেলার যুগ্ম আহ্বায়ক। আহ্বায়ক ছিল না কেউ। সদস্য সচিব ছিলেন আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া। কোষাধ্যক্ষ ছিলেন শামসুল হোসাইন। মেলা উপ-পরিষদের উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক আবুল মোমেন। যা পুরো বাংলাদেশেই প্রথমবার। স্বল্প সময়ের মধ্যে এই বিজয় মেলা জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বাঙ্গালির সংস্কৃতিতে পরিণত হয়ে উঠে এবং তা চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
পরবর্তীতে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্যোগে চট্টগ্রামে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে প্রতিপাদ্যে রেখে চট্টগ্রামে এই প্রথম আয়োজিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/জেএইচ