সিআরবিতে হাতপাখা ব্যবসায় বৈশাখী হাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্গম গ্রামে কিংবা লোডশেডিংয়ের শহুরে জীবনে শীতল পরশ বুলিয়ে দেয় তালপাতার তৈরি হাতপাখা। প্রযুক্তির উৎকর্ষে হয়তো হাতপাখার চাহিদা কমেছে। তবে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হাতপাখা। ঐতিহ্যবাহী এই হাতপাখা এখন সবখানে পাওয়া যায় না। কোনো মেলা-উৎসবে হয়তো দেখা মেলে।

আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে উদযাপিত হয় বাংলা বর্ষবরণ উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে বসেছে মেলা। মেলায় বিভিন্ন গ্রামীণ ঐতিহ্যের পাশাপাশি উঠেছে তালপাতার হাতপাখা। যার সুশীতল হাওয়ায় নিমিষেই দুর হয় ক্লান্তি।

আমাদের দেশে বেশ কয়েক রকমের পাখা লক্ষ্য করা যায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তালপাতার তৈরি হাত পাখা, যা এই বাংলায় সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ও ব্যবহৃত। এছাড়াও রয়েছে নকশী পাখা ও ঘোরানো পাখা। নকশী পাখা মূলত বাংলাদেশের লোকশিল্প হিসেবে স্বীকৃত। আর ঘোরানো পাখায় একটি বড় দন্ড থাকে, যেটা হাতের মুঠোয় ধরে হাওয়া খেতে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিআরবি পহেলা বৈশাখ উৎসবে নানা রকম পসরা সাজিয়ে বসেছে অনেকে। এর মধ্যে তালপাতার পাখার দোকানও বসেছে। এই দোকানগুলো ঘিরে ভিড় ছিল মোটামুটি। তবে বেচাকেনা নেই বললে চলে। কেউ কেউ অনেকে নেড়েচেড়ে দেখেই চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দর-দাম করতে করতে ফ্রিতে হাতপাখার বাতাস খেয়ে না কিনেই কৌশলে সরে পড়ছেন।

এসময় কথা হয় হাতপাখা বিক্রেতা জমিরের সাথে। তিনি বলেন, এটা আমার সাইট ব্যবসা। মেলা-খেলা হলে হাতপাখা বিক্রি করি। তবে এখন কেউ বাতাসের জন্য পাখা কিনে না, দেখতে সুন্দর তাই কিনে।

সিআরবি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হাতপাখা হাতে ঘুরছিলেন মরিয়ম আক্তার নামে এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, আজ বেশ গরম পড়ছে, তাই হাতপাখাটা কিনলাম। বাসায় হাতপাখা কেউ ব্যবহার করে না। ছোটবেলায় গ্রামে সবার ঘরে ঘরে হাতপাখা ছিল। এখন প্রযুক্তির বদৌলতে হাতপাখা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এই পাখাটা সুন্দর লাগছে, বাসায় যত্নে সাজিয়ে রাখবো।

জানা যায়, আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর আগে গ্রিক-রোমানদের যুগে হাতপাখা প্রথম প্রচলন হয়। চীন ও জাপান থেকে ইউরোপীয় বণিকরা প্রথম হাতপাখা নিয়ে আসেন। সেই হাতপাখাগুলিতে মণিমুক্তো, সোনারুপো, হাতির দাঁত, বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক ঘটনা, ধর্মীয় কাহিনি, ফুল, ফল, পাখি, নানা নিয়মাবলী আঁকা থাকত। কারণ এইসব চিত্র দেখেই সাধারণ মানুষ বর্তমান সমাজ সম্বন্ধে কিছুটা ধারনা পেতেন। প্রথমদিকে পাখাগুলি একটি ভাঁজের হলেও পরবর্তীতে পাখা ভাঁজে ভাঁজে তৈরি হতে শুরু হয়। আঠারো শতকের প্রথম দিকে ইউরোপের হাত ধরে হাতপাখা তৈরির শুভসূচনা হলেও, চীনের পাখার বাজার বেশ প্রসার ঘটে। পুরনো দিনের সেই পাখাগুলির বেশ কিছু নমুনা এখনও সংগ্রহশালায় রয়েছে। পরে চীন ও জাপান থেকে ইউরোপীয় বণিকরা এ অঞ্চলে প্রথম হাতপাখা নিয়ে আসেন। তবে বর্তমানে হাতপাখার ব্যবহার এতোটা না হলেও এর স্মৃতি আমাদের হৃদয়ে এখনো বিরাজ করে।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ

Scroll to Top