সাগরপথে মহেশখালী থেকে জ্বালানি তেল আসবে চট্টগ্রামে

চুক্তি স্বাক্ষর

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: দেশের জ্বালানি খাতে অন্যতম বড় প্রকল্প সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) পরিচালনায় চলতি মাসে অপারেটর প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি) এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরির জন্য কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেলেই অপারেটর প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের (সিপিপিইসি) সঙ্গে চুক্তি করা হবে।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন-চলতি ডিসেম্বরেই অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। সব কার্যক্রম শেষে নতুন বছরের শুরুতেই বাণিজ্যিকভাবে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশের জ্বালানি খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। সাগরে ভাসমান বড় জাহাজ থেকে সরাসরি খালাসের পর মহেশখালী হয়ে জ্বালানি তেল পাইপলাইনে করে চট্টগ্রামে আনা যাবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) অনুপম বড়ুয়া। তিনি বলেন, এসপিএম প্রকল্প পরিচালনা করতে অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের আগে টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পেলেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে যাবে। আশা করছি, নতুন বছরের শুরুতেই প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করা যাবে।

গত বছরের নভেম্বরে ‘এমটি হরে’ জাহাজ থেকে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে অপরিশোধিত তেল (ক্রুড অয়েল) খালাস সফল হয়। এরপর ডিসেম্বরে ‘এমটি জেগ অপর্ণা’ জাহাজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজেল খালাস সফল হয়। তবে অপারেটর নিয়োগ না করায় বাণিজ্যিকভাবে প্রকল্পটি চালু করা যাচ্ছিলো না। এখন অপারেটর নিয়োগের পর তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেলে সেই বাধাও দূর হবে।

সূত্র জানায়, বন্দরের অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় তেলবাহী বড় জাহাজগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে ছোট লাইটারেজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ১ লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ খালাসে ১০-১১ দিন এবং ৩০ হাজার মেট্রিকটন ডিজেলবাহী জাহাজ খালাসে ৪-৫ দিন সময় লাগে।

গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় বড় জাহাজ থেকে সরাসরি তেল খালাসের জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপলাইনে করে জ্বালানি তেল পরিবহনে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে নগরের পতেঙ্গার মধ্যে সংযোগ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।

৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ের এই প্রকল্পে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপক‚ল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে এসপিএম স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে। ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে নিয়ে আসা হবে কালারমারছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন এন্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে।

ট্যাঙ্ক ফার্ম থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে জ্বালানি তেল চলে যাবে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। এসপিএম চালু হলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) বছরে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top