সাংবাদিকদের ওপর হামলা— সিইউজের কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)। সমাবেশ থেকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান সাাংবাদিক নেতারা। এতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ সংহতি প্রকাশ করেন।

দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখারের গ্রামের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাট, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ ক্যামেরাপারসন সেলিম উল্লাহর ওপর যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা এবং চট্টগ্রাম প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার রিমন সাখাওয়াতের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, পেশাগত দাায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রামে একের পর এর সাংবাদিকের ওপর হামলা হচ্ছে। সাংবাদিকের গ্রামের বাড়িতেও সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। এমন অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় মধ্য দিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছে সাংবাদিকরা।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ ও সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সিইউজের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সিনিয়র সহ-সভাপতি রুবেল খান, বিএফইউজে—বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিক আহমেদ সাজিব।

সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে সিইউজের সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। অবিলম্বে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানান তিনি।

সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম বলেন, ডবলমুরিং এলাকায় দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের ঘংষর্ষের সময় ভিডিওধারণ করায় সাংবাদিক সেলিম উল্লাহকে হত্যার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও তারা জামিনে বেরিয়ে আবার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। বন্দর এলাকায় অবৈধ পানির ব্যবসার তথ্য সংগ্রহের সময় রিমন সাখাওয়াতকে হত্যার চেষ্টা করে প্রভাবশালীরা। এছাড়াও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক চট্টগ্রাম প্রতিদিন সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখারের গ্রামের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায় সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনায় আমরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

অবিলম্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও বাড়িতে লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারপূর্বক বিচারের জোর দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক বলেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য এবং দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখারের গ্রামের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাটের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমন ঘটনা সাংবাদিক তৌফিক ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকিস্বরূপ।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, সাবেক সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও মোস্তাক আহমদ, সিইউজের সহসভাপতি অনিন্দ্য টিটো, সাংগঠনিক সম্পাদক মহরম হোসাইন, অর্থ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সরওয়ার কামাল, নির্বাহী সদস্য আলাউদ্দিন হোসেন দুলাল, প্রতিনিধি ইউনিটের প্রধান সোহেল সরওয়ার, পূর্বদেশ ইউনিট প্রধান জীবক বড়ুয়া, প্রেস ক্লাবের সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক আল রাহমান, টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারী রুনা প্রমুখ।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ইয়াসির সিলমী, পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ।

গত ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা গ্রামে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখারের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় সন্ত্রাসীরা বাড়ির দেয়াল টপকে জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে বাড়ির কেয়ারটেকারকে বেঁধে ফেলে। কালো মুখোশে মুখ ঢাকা ছয় সন্ত্রাসী সাংবাদিক তৌফিকের খোঁজে বাড়ির প্রতিটি কক্ষ তল্লাশি করে। এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করেনি।

রোববার (২১ এপ্রিল) রাত সোয়া ১০টার দিকে ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ এলাকার মসজিদের সামনে ডিবি অফিসের পাশে দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা সাদ্দামের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ ক্যামেরাপারসন সেলিম উল্লাহর ওপর হামলা চালায়। পরে ক্যামেরাপারসন সেলিম বাদি হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনার পরদিন সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ৩টার দিকে নগরের বন্দর থানার পশ্চিম নিমতলা এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি নিয়ে অবৈধ ব্যবসা সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে একদল দুর্বৃত্ত চট্টগ্রাম প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার রিমন সাখাওয়াতের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন। পরে কৌশলে তাদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে রিমন সাখাওয়াত নগরীর বন্দর থানায় একটি জিডি দায়ের করেন।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top