চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: সরকারি খরচে কোনো অতিথিকে হজ করানো হবে না বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় আমরা পরিবর্তন এনেছি।
এরইমধ্যে খরচ এক লাখ টাকা কমানো হয়েছে, হজ ব্যবস্থাপনার ভেতরের কিছু ত্রুটিও দূর করা হয়েছে। সেই সাথে সরকার কিংবা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের খরচে কোনো অতিথিকে বিনা পয়সার হজ আমরা করাবো না বলে একমত হয়েছি। শুধু হজ ব্যবস্থাপনার সাথে যারা যুক্ত একমাত্র তারাই হজে যাবেন। সেই সাথে কিছু গোয়েন্দাও নেবো। কোনো এজেন্সি যদি কোনো হাজির সাথে প্রতারণা করে তাহলে তাকে আমরা ধরবো।
ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি বেতন কাঠামো তৈরি করছে। এর কাজ চলমান রয়েছে, কাজ শেষে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নিয়ে যার গেজেট করা হবে। আর এটি সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ইমামদের জন্য কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে যেসব মসজিদ বেসরকারিভাবে পরিচালিত তাদেরও আমরা উদ্বুদ্ধ করবো। পাশাপাশি ইমাম মুয়াজ্জিনদের মসজিদের কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা প্রস্তাব রেখেছি, সেই সাথে তাদের যেন উৎসব ভাতা দেওয়ার প্রস্তাবও রেখেছি। আশা করি, এতে ইমাম মুয়াজ্জিনদের জীবনমান উন্নত হবে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে বরিশাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি বরিশাল কেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ বলেন তিনি।
ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের উদ্দেশ্যে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি, এর মাধ্যমে মানুষের সক্ষমতা বাড়ে, উৎসাহ-উদ্দীপনা সাধিত হয় এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা আমরা অর্জন করতে পারি। যেসব ইমাম মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বা নিচ্ছেন তারা ইমামতির পাশাপাশি যাতে ছোট ব্যবসা (কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, খেত-খামার, কবুতর পালন অথবা কোয়েল পাখি পালন) করে স্বাবলম্বী হতে পারেন; এজন্য বিনা সুদে আমরা তাদের ঋণ দিচ্ছি। অর্থাৎ আপনি সামান্য পুঁজি নেবেন, আমরা সামান্য পুঁজি দেবো ইমামতির পাশাপাশি ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হবেন, এতে লজ্জার কিছু নেই। পেটের ভাত যোগার করা ইবাদত, সব নবীরা হাতে কাজ করেছেন। আমি ইমাম হয়েছি বলে একটু কৃষি কাজ কি করতে পারবো না?
তিনি বলেন, ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্ডে ভালো অ্যামাউন্ট আছে। আমরা চাচ্ছি ব্যাংকে পড়ে থাকা টাকাগুলোকে ইউটিলাইজ করে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের কল্যাণে কাজে লাগাতে।
আমরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করবো, সেখান থেকে মিনারেল ওয়াটার তৈরি করে বাজারে সাপ্লাই দেবো, যা লাভ হবে সেটা ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের কল্যাণ ট্রাস্টে যাবে। আমাদের সময় কম হলেও আমরা শুরু করে দিতে চাই, আর কারও কাছে আমাদের টাকাও চাইতে হবে না। আমরা প্রাথমিকভাবে নিয়ত করেছি পানির বোতলের নাম দেবো ‘ইমাম’।
জাকাতের বিষয়ে তিনি বলেন, মোবাইলে একটি অ্যাপস করা হয়েছে, এর কার্যক্রমের রিভিশন চলছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ ঘরে বসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ডে টাকা দিতে পারবে।
সব থেকে বেশি জাকাত চট্টগ্রামে এবং সব থেকে কম নীলফামারীতে জাকাত আদায় হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ইমামরা মসজিদে জাকাতের বিষয়ে মুসল্লিদের মাঝে বলবেন। আমাদের এখান থেকে এক টাকাও এদিক সেদিক হওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ১১০ কোটি টাকা খরচ করে বায়তুল মোকাররমকে আমরা বিউটিফিকেশন করবো, ডেভেলপমেন্ট করবো। যেখানে ঢুকলেই মানুষের মনের ভেতর আল্লাহর ইবাদত করার মানসিকতা জন্মে। বায়তুল মোকাররমকে আমরা জাতীয় মসজিদ হিসেবে, দৃষ্টিনন্দন হিসেবে তৈরি করবো।
তিনি বলেন, আমাদের যারা দীর্ঘদিন কোনো কারণ ছাড়া পদোন্নতি পাননি তাদের তা দেওয়া হবে। অনেক শূন্যপদও আছে তারমধ্যে কিছু পদও পূরণ করা হবে। কারও কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাকে অথবা ডিজিকে দেবেন। আমরা মন্ত্রণালয়কে সচল, প্রাণবন্ত, অ্যাকটিভ করতে চাই।
তিনি বলেন, ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা হচ্ছে তৃণমূলে ইসলামের প্রতিনিধি, সামাজিক শক্তি। সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা গেলে, দেশের জন্য বিরাট শক্তিতে পরিণত হবে। ধর্মের নামে হানাহানি আমাদের জন্য বেদনার।
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, হিন্দু, খ্রিস্টান, মুসলমান, বৈদ্যসহ বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী আমরা সবাই এদেশের নাগরিক এবং প্রত্যেকের অধিকার সমান, আর এই অধিকার সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ-বৈষম্যহীন সমাজ-রাষ্ট্র উপহার দিতে চাই। আগামীতে যারা আসবেন তাদের পথ সুগম করতে চাই।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ