নিজস্ব প্রতিবেদক : সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের ৪৭০ একর ভূমি কাগজে ডোবা দেখিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপকে বেআইনিভাবে ইজারা দেয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক ডিসি মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে দুনীর্তি দমন কমিশন দুদক।
কমিশন বলছে, সমুদ্র সৈকতকে ডোবা দেখিয়ে একটি শিল্প গ্রুপকে ইজারা দেয়ায় রাষ্ট্রের প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। অভিযোগটি তদন্তের জন্য দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ কে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিশন। তবে এ অনিয়মের বিষয়টি কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তদন্ত করা হবে নাকি চট্টগ্রামকে দায়িত্ব দেয়া হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা পায়নি দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্র সৈকতকে ডোবা দেখিয়ে বসুন্ধরাকে বরাদ্দ শিরোনামে গত বছরের ১০ অক্টোবর গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ওই বরাদ্দের বৈধতা নিয়ে এবং তদন্তের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত ডিসেম্বরে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ কাওছার। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি রুলসহ এ আদেশ দেন। পাশাপাশি কমিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ইতোমধ্যে তিনমাস সময়ের দুই মাস ২০ দিনের মত সময় অতিবাহিত হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বসুন্ধরা গ্রুপকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চর বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের তিনটি মৌজা থেকে সমুদ্র সৈকতের বালুচর শ্রেণির ৪৭০ একর জমিকে নথিপত্রে ডোবা দেখিয়ে বরাদ্দ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বরাদ্দ দেয়ায় বাজারমূল্যের তিনগুণ কম দামে বরাদ্দ পায় বসুন্ধরা গ্রুপ। মৌজা রেট অনুযায়ী বালুচর শ্রেণির (সৈকত) ৪৭০ একরের বর্তমান মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৩৫ কোটি টাকা (২০১৭-১৮ সালের মৌজার মূল্য অনুযায়ী)। শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে সেটা মাত্র ৫৫ কোটি (প্রায়) টাকায় দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয় বসুন্ধরাকে। আর ভূমির এ শ্রেণি পরিবর্তন করায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয় প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা।
২০১৮ সালের ৫ আগষ্ট সমুদ্র সৈকতের ৪৭০ একর জায়গা ইজারার জন্য বালুচর শ্রেণির ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বসুন্ধরা গ্রুপ। আবেদনে দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্তি চাওয়া ভূমির সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের ক্রয়কৃত সম্পত্তি আছে বলেও জানানো হয়।
আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাসজমি–১ শাখা থেকে চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়। একই বছর ৮ জানুয়ারি সীতাকুণ্ড উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় কানুনগো আর সার্ভেয়ার দিয়ে নড়ালিয়া, বোয়ালিয়া ও চর বাঁশবাড়িয়া মৌজার প্রতিবেদন ও মতামত নেন।
প্রতিবেদনে ২৫৫.৭৭ একর সমুদ্র সৈকতকে ডোবা শ্রেণিতে পরিবর্তন করা যেতে পারে বলে মন্তব্য দেন কানুনগো আর সার্ভেয়ার। ৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় সে প্রতিবেদন সুপারিশসহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চর বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি শ্রেণি পরিবর্তনের গণবিজ্ঞপ্তি দেন এবং এ বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি আসেনি দাবি করে শ্রেণি পরিবর্তন করে নেন।
এ ব্যাপারে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১’র উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিষয়টি তদন্তের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমরা এখনো সম্যক অনুসন্ধানের নির্দেশনা পাইনি। প্রশাসনিক আরও কিছু কার্যক্রম আছে। কমিশন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে করবে নাকি আমাদেরকে দায়িত্ব দেবে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ