সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ‘বুড়ির নাতি’ ডাকে কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) হাতে গ্রেফতার ১৫ মামলার আসামি টপ টেরর সাজ্জাদ হোসেন এখন টক অব দ্য টাউন। চাঁদাবাজি, হত্যা, হামলা, পুলিশকে গুলি করা, তাকে গ্রেফতারে পুলিশের সর্বশেষ পুরস্কার ঘোষণার ঘটনায় গত কয়েকমাস ধরে সাজ্জাদ ছিলেন সংবাদের শিরোনাম। তবে এই সাজ্জাদ এলাকায় বুড়ির নাতি হিসেবে পরিচিত। পুলিশের খাতাতেও সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’ লেখা রয়েছে। এই ছোট সাজ্জাদ কেন ‘বুড়ির নাতি সাজ্জাদ’ হিসেবে পরিচিত-তা জানতে জনমনেও কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।

সাজ্জাদের পরিচয়

বায়েজিদ থানায় দায়েরকৃত একটি মামলার এজাহারে দেখা যায়, গ্রেফতার মো. সাজ্জাদ প্রকাশ বুড়ির নাতি নামে লিপিবদ্ধ। তার বাবার নাম মো. জামাল, মায়ের নাম- রুনা বেগম। ঠিকানায় লেখা রয়েছে- হিন্দুপাড়া বিলের মাঝখানে (নগেন্দ্র লাল চৌধুরীর হাটখোলার পাশে) ১ নং ওয়ার্ড, ১৪ নং শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদ, হাটহাজারী, (বর্তমানে আমানবাজার, সোনা মিয়া সওদাগর বাড়ি (নূর মার্কেট)।

কে এই বুড়ি?

সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনকে যে ‘বুড়ির নাতি’ নামে ডাকা হয়। সে বুড়ির নাম রেহেনা বেগম প্রকাশ রাহেলা বেগম। রাহেলা বেগম সাজ্জাদের মায়ের মা। অর্থাৎ তার নানী। বায়েজিদ থানা পুলিশের খাতাতে সাজ্জাদের বাবা, মায়ের নামের সাথে এই নানীবুড়ি রাহেলা বেগমের নামটিও লিপিবদ্ধ আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিকারপুর ইউনিয়নের এক বাসিন্দা জানান, সাজ্জাদ হোসেন তার নানার বাড়িতে বেড়ে উঠেছেন। সাজ্জাদের বাবার বাড়ি আর নানার বাড়ি কাছাকাছি এলাকা। তাঁর শিশুকাল, কৈশোরকাল কেটেছে নানার বাড়িতে। নানী রাহেলা বেগমের কোলেপিঠে মানুষ হয়েছেন এই সাজ্জাদ হোসেন। ফর্সা, সুন্দর, নাদুসনুদুস শারীরিক গঠনের কারণে নানার বাড়ি সবাই তাকে ভীষণ আদর করতেন। নানার বাড়িতে বেড়ে ওঠা নানী রাহেলা বেগমের আদরের মনি সাজ্জাদ ছোটবেলা থেকেই ডানপিঠে স্বভাবের ছিলেন। তার নানী রাহেলা বেগমকে পাড়াপ্রতিবেশিরা বুড়ি নামে ডাকতেন। ছোটবেলা থেকেই ঝগড়া-বিবাদ, বাকবিতন্ডা, মারামারি যখন যেখানে যা কিছু হোক না কেন- কোন সাজ্জাদ করেছে? ও আচ্ছা ‘বুড়ির নাতি সাজ্জাদ’; ছোটবেলা থেকে লোকমুখে এভাবেই সাজ্জাদ ‘বুড়ির নাতি’ হয়ে উঠেন।

সাজ্জাদের সন্ত্রাসী জীবন

কৈশোর বয়স থেকেই সাজ্জাদ সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। হাটহাজারীর আরেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের হাতেই এই সাজ্জাদের উত্থান। আলোচিত এইট মার্ডার মামলার দণ্ডিত আসামি বড় সাজ্জাদ ২০০০ সালে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হন। ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। বিদেশ থেকে বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এসব এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি বেচাকেনা করলেই বিদেশ থেকে বড় সাজ্জাদের ফোন আসে। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে নুরুন্নবী ম্যাক্সন ভারতে মারা যায়। একাধিকবার গ্রেপ্তারের পর দলছুট ঢাকাইয়া আকবর। সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা পক্ষ ত্যাগ করে নিজেই বাহিনী গড়েছেন। এতে করে বড় সাজ্জাদের বাহিনীতে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। আর শূন্যতা পূরণে ছোট সাজ্জাদকে গড়ে তোলেন বড় সাজ্জাদ।

পুলিশের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। একই বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাজ্জাদের বেপরোয়া হয়ে উঠে।

গতবছরের ২৯ আগস্ট রাতে কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে মো. আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়ছারকে (৩২) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলাতেই আসামি সাজ্জাদ। একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামীর কালারপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি চালায় সাজ্জাদ। গত ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাসে এসে দিবালোকে গুলি করে আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৬) নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে সাজ্জাদ আবারও আলোচনায় আসে।

গত ৫ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন আহত হন। গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে প্রকাশ্য পেটানোর হুমকি দেন। এরপর ৩০ জানুয়ারি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে সিএমপি। গত ১৫ মার্চ ঢাকায় বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে ঈদের শপিং করার সময় সিএমপি পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হন মো. সাজ্জাদ হোসেন।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top