নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাসে অন্যান্য সময়ের তুলনায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে যানবাহনের আধিক্য অন্যদিকে ঈদ শপিংয়ে আসা ক্রেতাদের ভিড়ের কারণে নগরীর যানজট অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম নগরীর পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র ১২০০ ট্রাফিক পুলিশ। স্বাভাবিক সময়ে ৯০০ পুলিশ সড়ক নিয়ন্ত্রণ করলেও রমজান উপলক্ষে অতিরিক্ত ৩০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে সিএমপি। তবে এ সীমিত সংখ্যক লোকবল দিয়ে পুরোপুরি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রীতিমত হিমশিম অবস্থা।
অসহনীয় যানজটের কারণ:
(১) রমজান মাসে নগরীতে স্বাভাবিকের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার উপর নগরীতে বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়ক। নগরীর বহদ্দারহাট মুরাদপুর সড়ক এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে খাল-নালা উদ্ধার ও সংস্কার কাজ চলছে। এতে করে সংশ্লিষ্ট সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
(২) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় বহদ্দারহাট স্বজন সুপার মার্কেটের সামনের নালার উপর বসা ফলের বাজার ও হকাররা এখন রাস্তায় চলে এসেছে। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়ক। তাছাড়া পথচারীরাও এখন পথ চলাচলে বাধ্য হয়ে সড়ক ব্যবহার করছেন। সমূহ কারণে বর্তমান সময়ে যানজট বহদ্দারহাটের নিত্য সমস্যা হয়ে উঠেছে।
(৩) জিইসি মোড় সংলগ্ন নার্সারি এলাকা থেকে বাওয়া স্কুল এলাকা সড়কে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে র্যাম্প নির্মাণ কাজ চলমান। এ নির্মাণ কাজের জন্য সড়ক ঘেরাও করে রেখেছে উন্নয়নকারী সংস্থা। ফলে মূল সড়কটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। অথচ এ সড়ক নগরীর ব্যাকবোন রোড। সড়ক সংকুচিত হবার কারণে বর্তমানে এ সড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
(৪) সাম্প্রতিক সময়ে আবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় চলছে ফুটপাত নির্মাণ কাজ। নগরীর জামালখান সড়ক, মোমিন রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় চসিকের এ নির্মাণ কাজ চলছে। এতে করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
(৫) নগরীর যানজট সৃষ্টির জন্য গাড়িচালকদের ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও নাগরিক অসচেতনতাও একটি বড় কারণ বলে মনে করছে সিএমপি।
সিএমপি ট্রাফিকের উদ্যোগ:
রমজান মাস উপলক্ষে নগরীর প্রধান সড়ক ও ব্যস্ততম এলাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কগুলোতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাজার ও শপিং মলগুলোর সামনে অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেল ও সন্ধ্যার দিকে যানজট এড়াতে গণপরিবহনগুলোকে বিকল্প রুট ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে নিউমার্কেটমুখী নগরীর ট্রাফিক রুট ১নং রুটকে আন্দরকল্লিা মোড়, ২ নম্বর, ৪ নম্বর, ৬ নম্বর, ৭ নম্বর, ৮ নম্বর, ১৩ নম্বর রুটের গণপরিবহনগুলোকে টাইগারপাস মোড়, ৩ নম্বর রুটকে নন্দনকানন বৌদ্ধমন্দির মোড়ে স্টপেজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশের যৌথ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভারী যানবাহনের চলাচল সীমিত করা হবে। তবে বন্দর কেন্দ্রিক পরিবহন,ওষুধ পরিবহনকে বিশেষ বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। দিনের বেলায় সাধারণ পণ্যবাহী ভারী যানবাহন শহরের মূল রাস্তায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর) উপ–কমিশনার জয়নুল আবেদিন বলেন, রোজার মাসের প্রথম ১০ দিন প্রথম ট্রাফিক প্ল্যানটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে নগরীতে যানবাহন, ক্রেতা ও যাত্রী সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এখন থেকে ঈদ পর্যন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সিএমপির পক্ষ থেকে শুধু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাই নয়, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী অপতৎপরতা বন্ধ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সকল ধরণের প্ল্যান বাস্তবায়নে স্ব স্ব পুলিশ বাহিনী নিরন্তর কাজ করছে। ট্রাফিক পুলিশের সাথে ক্রাইম বিভাগের সদস্যরাও সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবেন। প্রতিটি থানাকে এই ব্যাপারে কমিশনার স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন। কমিশনার স্যারের নির্দেশে আমরা পুলিশ বাহিনী স্ব স্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করছি।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ