সিপ্লাস ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫তম ও ২০২৩ সালের পঞ্চম অধিবেশন শেষ হয়েছে। এটি একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন।
অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ চলতি অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন।
এর আগে ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি বাস্তুহারাদের উদ্দেশ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের অডিও শুনানো হয়। ৯ মিনিট ১০ সেকেন্ডের এই ভাষণটি বাংলাদেশ বেতার থেকে সংগ্রহ করা হয়।
গত ২২ অক্টোবর থেকে ৯ কার্যদিবস পর্যন্ত অধিবেশন চলার পর আজ ২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হয়। এই অধিবেশনে আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী-বিধির ৭১ বিধিতে ২১টি নোটিশ পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ২৬টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, এরমধ্যে তিনি ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ৭২২ টি প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীরা ৫৪১টি প্রশ্নের জবাব দেন। এ অধিবেশনে ২৫টি বিল পাস হয়। প্রস্তাব (সাধারণ) বিধি ১৪৭ এ ১টি প্রস্তাব আলোচনা ও পাস হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ১ হাজার ৩৩৬টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, এরমধ্যে তিনি ৫৬৬টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ৩০ হাজার ৬৪১টি প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীগণ ১৭ হাজার ৭৬২টি প্রশ্নের জবাব দেন। একাদশ সংসদে মোট ১৬৫টি বিল পাস হয়।
অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে স্পিকার বলেন, এটি একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন। এরপরই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আর অধিবেশন বসবে না। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে।
তিনি বলেন, সরকার ও বিরোধী দলের অংশগ্রহণে একাদশ সংসদ সফল সংসদ হিসেবে কাজ চালিয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস হচ্ছে সরকার ও বিরোধীদলের অংশগ্রহণে আন্তরিক পরিবেশে জনগণের কল্যাণে কাজ করা। এ সংসদে সেটাই হয়েছে। দীর্ঘ ৫ বছর সংসদীয় কার্যক্রমে সহায়তার জন্য তিনি সরকারি ও বিরোধীদলের সকল সংসদ সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি সকলের দীর্ঘায়ু কামনা করেন। একইসাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সকল দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘সংসদ জাতীয় রাজনীতির সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমেই আমরা এই মহান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি। একমাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনই সুশাসনের আবহ তৈরি করতে পারে। আর সুশাসনের অন্যতম পূর্বশর্তই হচ্ছে জাতীয় সংসদে এসে যে কোন বিষয়ে কার্যকর আলোচনা এবং আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। জাতীয় পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য মহান সংসদই হচ্ছে অন্যতম স্থান। আগামীতেও জাতীয় সংসদ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে দেশে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনকল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।’
তিনি বলেন, ‘সংসদ কার্যকর থাকলেই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সুসংহত হয়। সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সংসদে গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে তারা সরকারকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। আশাকরি এ লক্ষ্যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও উন্নয়নের মত মৌলিক প্রশ্নে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বীয় অবস্থান থেকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো।’
স্পিকার বলেন, অব্যাহত উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী উন্নয়নশীল কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত-সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ দেশের যে অঞ্চলেই বসবাস করুক না কেন, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সমতার ভিত্তিতে পেতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ মেট্রোরেল, স্বঅর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের সফলতার জয়যাত্রায় যুক্ত করেছে অনন্য মাইলফলক। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। আসুন, আমাদের মাতৃভূমিকে এমনভাবে গড়ে তুলি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারে।’
সংসদ অধিবেশন পরিচালনায় সহযোগিতার জন্য স্পিকার সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি যিনি সার্বক্ষণিক সংসদ পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদান করেছেন। তিনি সংসদ উপনেতা, মন্ত্রিসভার সদস্য, চীফ হুইপ ও হুইপবৃন্দ এবং সকল সংসদ সদস্যদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বিরোধী দলীয় নেতার প্রতিও সংসদ কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
স্পিকার সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদেরকে তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। আন্তরিক ধন্যবাদ জানান সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে। তিনি ধন্যবাদ জানান পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদেরকে। তিনি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, বাংলাদেশ বেতার, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও বেসরকারী টিভি চ্যানেলসহ দেশের সকল গণমাধ্যমের সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেইসাথে তিনি ৩০ লাখ শহীদ এবং দু’লাখ মা-বোনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।