‘ষড়যন্ত্রকারীদের বলে দেবেন— আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না’

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : ফেসবুক-ইউটিউবে বিভিন্ন কনটেন্ট ছড়িয়ে জুলাই ঐক্য বিনষ্ট করা হচ্ছে উল্লেখ করে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেছেন, ‘আপনারা যদি আপনাদের পরিণতি সঠিক চান, দেশটাকে যদি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মুক্ত করতে চান, আপনাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আপনারা ষড়যন্ত্রকারীদের বলে দেবেন, আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না।’

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে নগরীর সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ‘জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহতদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায়’ তিনি এ কথা বলেন।

এসপি সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, ‘আপনাদের ঐক্য যে বিনষ্ট করা হচ্ছে, এটা আপনারা খেয়াল করছেন না। আপনারা যদি এটা খেয়াল না করেন, শত্রুরা সুযোগ পেয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, এটা তাদের সাইবার ওয়ারফেয়ারের একটা অংশ। এই অংশকে আপনাদের প্রতিহত করতে হবে। শত্রুরা কিন্তু আবার আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

জুলাই যোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের ভাইদের কখনো ভুল বুঝবেন না। একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যারা যুদ্ধ করেছেন, তারা আজীবন ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। তাহলে কেউ আপনাদের পরাজিত করতে পারবে না। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকেন, আপনাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। আপনাদের সঙ্গে আমরা যারা প্রশাসনে রয়েছি, তখন আমাদেরও কিন্তু একই পরিণতি বরণ করতে হবে।’

এদিকে একই সভায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের ব্যর্থতার কারণ খতিয়ে দেখতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ডিআইজি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশকে অনেকসময় অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। পুলিশের গুলিতে অতীতে যে লোক মারা যায়নি, তা কিন্তু নয়। কিন্তু মানুষ সেগুলো মেনে নিয়েছে। ভেবেছে, হয়তো পুলিশের কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে বা আমাদের কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু এবারের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের যে ভূমিকা ছিল, আমরা যারা পুলিশে আছি, আমরাও অত্যন্ত ব্যথিত।’

ডিআইজি বলেন আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম, পুলিশ একদিন বড় ধরনের ধাক্কায় পড়ে যাবে। পুলিশ সেই ধাক্কায় পড়েছেও। ৩ আগস্টের পরে পুলিশের অনেকে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাদের জনগণের সঙ্গে থাকা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের তখনকার নেতৃত্ব বুঝতে পারল না যে, আমাদের জনগণের সঙ্গে থাকা দরকার। এটা পুলিশের বিরাট ব্যর্থতা।’

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আজ বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন কমিশন গঠন হয়েছে, আপনারাও যদি কখনো সুযোগ পান, তাহলে পুলিশের এ ব্যর্থতা নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে জানার চেষ্টা করুন, পুলিশ কেন এ কাজগুলো করলো, কাদের নেতৃত্বে, কাদের ব্যর্থতায়, কাদের প্ররোচনায়? এটা কি ইন্টারনাল কোনো ইস্যু ছিল না-কি কোনো বহিঃশত্রু এর পেছনে কাজ করেছে, এগুলো ভাববার দরকার আছে। আপনারা দয়া করে এটা করবেন।’

জুলাই যোদ্ধাদের পথভ্রষ্ট না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কারও কারও মধ্যে কিছুটা পথভ্রষ্টতা দেখা গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর তারা হয়তো সঠিক পথ পাননি, কাজ পাননি, এজন্য হয়তো কেউ কেউ পথভ্রষ্ট হয়েছিলেন। আমি এ (জুলাই) আন্দোলনে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের বলবো- এখনকার চেতনা কতদিন ধরে রাখতে পারবেন আমি জানি না। কিন্তু সেটা ধরে রাখেন, একটু পড়াশোনায় সম্পৃক্ত হোন, কিছু করার চেষ্টা করেন।’’

আলোচনা সভায় বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দিন, সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ এবং জুলাই আন্দোলনে শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের কয়েকজন বক্তব্য দেন।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top