শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরার পথে মারমা যুবককে গুলি করে খুন

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শ্বশুর বাড়ি থেকে ফেরার পথে এক মারমা যুবককে গুলি করে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা৷

শুক্রবার (২০ জুন) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের খাইন্দার কুল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে৷

নিহত যুবকের নাম শিবুউ মারমা (৩৫)। সে সরফভাটা বড়খোলাপাড়া এলাকার চিংচালা মারমার ছেলে।

জানাযায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রীসহ চন্দ্রঘোনা রাইখালী এলাকায় শ্বশুর বাড়ি যায়। একদিন থাকার পর স্ত্রীকে বাপেরবাড়ি রেখে শুক্রবার নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। ফেরার পথে সরফভাটা খাইন্দার কুল এলাকায় এলে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

নিহত শিবুউ মারমাকে বহনকারী অটোরিকশাচালক উখ্যাইমং মারমা পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়িতে সে আর নিহত শিবুউ মারমা দুজন ছিলেন। সরফভাটা হাজী রাস্তা দিয়ে নিহতের বাড়ি যাওয়ার পথে খাইন্দার কুল এলাকায় এলে নিহত শিবুউ মারমা গাড়ি থামাতে বলে এবং পার্কিং করতে বলে নামেন। এরপর চালককে দাঁড়াতে বলে পূর্বদিকে ইটের সড়কপথে পায়ে হেঁটে চলে যান। পরক্ষণেই শুনতে পান ওই সড়কের ব্রিজের উপর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কি কারণে এবং কারা হত্যা করেছে কিছুই বুঝতে পারেননি বলে জানান চালক উখ্যাইমং মারমা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গল সরফভাটার চোলাই মদ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। নিহত শিবুউ মারমার বাড়ি জঙ্গল সরফভাটার বড়খোলা পাড়া নামক মারমা পাড়ায়। এইখানে প্রচুর পরিমান চোলাই মদ উৎপাদন হয়। এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাজ করে যা অনেক সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এই ঘটনাও সেরকম এমনটাই ধারণা স্থানীয়দের।

এদিন বিকালে সরেজমিনে নিহতের বসতঘরে গিয়ে দেখা যায়, পুত্র হারানোর শোকে বিলাপ করে কাঁদছেন নিহতের মা ও শাশুড়ি। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন নিহতের স্ত্রী৷ তাদের শান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন পাড়ার অন্যান্য নারীরাও। এসময় তারা জানান, পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়। গত মে মাসের ৪ তারিখ তার বিয়ে হয়েছিলো। পেশায় লেবু, আম ও আদা চাষাবাদ করে সংসার চালাতেন তিনি। তাদের কোন শত্রু ছিলো না উল্লেখ করে কেনো এবং কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান স্বজনরা। তবে নিহতের মা সুইনু মারমাসহ স্বজনরা হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম জানান, ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার বুকের কাছে একটু গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন রয়েছে৷ তাৎক্ষণিক কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে জানা যায়নি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে। এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, এই খাইন্দার কুল এলাকায় ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর ঘরে ঢুকে কৃষক আমির হোসেন ও তার স্ত্রী জুলেখা বেগমকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন
করে সন্ত্রাসীরা। আর এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয় হত হয়েছেন তাদের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৫)।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা এই খাইন্দার কুল এলাকায় বাদশা মিয়ার পুত্র আবুল কাশেম (৩০) ও মৃত মনিরুজ্জামানের পুত্র মো. মঞ্জু (২৭) কে রাতের অন্ধকারে গুলি করে হত্যা করে। এসব ঘটনায় থানায় আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা হলেও আসামীরা সহজে আইনের আওতায় আসে না। যার পরিপ্রক্ষিতে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবাধে চলছে। সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে এই এলাকার অসংখ্য মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এখানকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এতকিছুর পরও প্রশাসনের টনক নড়ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top