‘শিশু বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যা’— ডিএনএ পরীক্ষায় ধীরগতি, ঝুলে আছে তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : আড়াই বছর পার হলেও চট্টগ্রাম নগরী জামাল খান এলাকায় ধর্ষণের পর খুন হওয়া শিশু মারজানা হক বর্ষার (৭) মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দিতে পারেনি পুলিশ। বর্ষার পরিবারের দাবি, ডিএনএ রিপোর্ট না আসায় চার্জশিট জমা দিতে পারছে না পুলিশ।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলা ১২ টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান শিশু বর্ষার পরিবার। দ্রুত বর্ষা হত্যা মামলার চার্জশিট দেওয়ার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, চিপস কিনতে বের হলে মুদি দোকানের কর্মচারীর হাতেই ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন নগরীর কুসুম কুমারি সিটি কর্পোরেশন স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মারজানা হক বর্ষা। এ ঘটনার তিনদিন পর জামালখান লিচু বাগান সিকদার হোটেলের পিছনে ড্রেনের উপর বস্তাবন্দি অবস্থায় পাওয়া যায় বর্ষার লাশ। এই ঘটনায় ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর রাতেই নগরীর কোতোয়ালী থানায় নিজে বাদী হয়ে মামলা করেন বর্ষার মা ঝর্ণা বেগম। তবে মামলার প্রায় আড়াই বছর পার হলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পুলিশ।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) নওশের কুরেশি বলেন, ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় এখনো তদন্ত ঝুলে আছে। আদালতের মাধ্যমে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি।

এই নিয়ে একাধিকবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৬ষ্ট আদালতে বাদী ও ভিকটিম পক্ষে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট তলবের আবেদন করেছেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন। এরপরও বর্ষা ধর্ষণ-হত্যা মামলার কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চোখে পড়েনি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলাগুলোতে গুরুত্ব না দেয়ায় আজ দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে একের পর এক নারকীয় শিশু ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনা।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজসহ বেশ কিছু আলামতের ভিত্তিতে শিশু বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় লক্ষ্মণ দাশ (৩০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লক্ষ্মণ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সে মারজানা হক বর্ষাকে চিনতো। ঘটনার দিন ১০০ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় বর্ষাকে গোডাউনে নিয়ে যায় লক্ষ্মণ। সেখানেই সে নাক-মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বর্ষাকে। এক পর্যায়ে রক্তপাত শুরু হলে দায় এড়াতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বর্ষাকে। এরপর বর্ষার নিথর দেহ গোডাউনে রাখা টিসিবির সীলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ড্রেনে ফেলে দেয়। একেএকে ফেলা হয় বর্ষার পরনে থাকা কাপড় ও ব্যবহৃত স্যান্ডেলও।

গ্রেপ্তার লক্ষ্মণ দাশ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর পদুয়া গ্রামের ফেলেরাম দাশের পুত্র। জামালখানে গোপাল মুহুরীর গলির এ কে এম জামাল উদ্দিনের বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় মুদি দোকান শ্যামল স্টোরের গোডাউনে থাকতো সে। বর্ষাদের বাসাও একই গলিতে। চাঁদপুরের বাসিন্দা বর্ষার বাবা-মা সেখানে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ছয় বোনের মধ্যে সবার ছোট বর্ষা।

বস্তায় টিসিবি’র সীলের সূত্র ধরেই লাশ উদ্ধারের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লক্ষ্মণ দাশকে পাকড়াও করে পুলিশ। পুলিশের জেরার মুখে বর্ষাকে নিষ্ঠুরতম নির্যাতনে খুনের দায় স্বীকার করে মুদি দোকানের কর্মচারী লক্ষ্মণ দাশ।

এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির জানান, লক্ষ্মণ খুনের দায় স্বীকার করেছিল। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোডাউনে ধর্ষণ ও খুনের আলামতও পাওয়া গেছে।

পুলিশ বলছে, ভয়ঙ্কর অপরাধের পরও লক্ষ্মণ ছিল নির্বিকার-নির্ভয়। তার মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও দেখা যায়নি। ধর্ষণ, খুন আর লাশ গুমের মতো ভয়ানক অপরাধ করার প্রায় তিনদিন পরও সে পালিয়ে যায়নি।

তবে এ ঘটনায় আসামিকে এখনো বিচারের আওতায় আনতে না পারায় হতাশ বর্ষার স্বজন ও স্থানীয়রা। তারা আত্মস্বীকৃত ধর্ষক ও খুনি লক্ষ্মণ দাশের (৩০) ফাঁসির দাবি জানান।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ

Scroll to Top