শহীদ ওয়াসিম উড়ালসড়ক, প্রতিদিন টোল দিচ্ছে না প্রায় ৫০০ গাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক : শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী মোট যানবাহনের মধ্যে দৈনিক গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ গাড়ি টোল দিচ্ছে না। এতে রাজস্ব আয় বঞ্চিত হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

সিডিএ’র অভিযোগ, সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অনেক যানবাহন নিয়মিত এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে চলেছে। অথচ তারা টোল পরিশোধ করতে চান না। টোল পরিশোধ না করেই সংশ্লিষ্ট সংস্থা- প্রতিষ্ঠানের এসব গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে চলেছে।

এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় নিয়ে সিডিএ’র প্রস্তুত করা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২১ মার্চ এক্সপ্রেসওয়ের চারটি লেনের মধ্যে ১নং লেইন ব্যবহার করেছে ১ হাজার ৫২১টি গাড়ি। তবে এর মধ্যে ১০৫টি গাড়ি টোল পরিশোধ করেনি। ২নং লেইন ব্যবহারকারী ১ হাজার ৪০২টি গাড়ির মধ্যে ৭২টি গাড়ি টোল পরিশোধ করেনি। ৩নং লেইন ব্যবহারকারী ১ হাজার ৪৪০টি গাড়ির মধ্যে ৮৬টি গাড়ি টোল দেয়নি। ৪নং লেইন ব্যবহারী ১ হাজার ৬৮৮টি গাড়ির মধ্যে ১১৬টি গাড়ি টোল পরিশোধ করেনি। ওইদিন মোট ৩৭৯টি গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ের টোল পরিশোধ করেনি। যা মোট যানবাহনের ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। ওই দিন ৫ হাজার ৬৭২টি গাড়ি থেকে সিডিএ’র রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার ৭৭০ টাকা। একই সময়ে টোল পরিশোধ না করা ৩৭৯টি গাড়ির বাবদে সিডিএ রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ২৭ হাজার ৩১৩ টাকা। মাসের হিসাবে সিডিএ’র এ রাজস্ব ক্ষতি দাড়াচ্ছে ৮ লাখ ১৯ হাজার ৪১৩ টাকা।

একইভাবে গতকাল ২২ মার্চ তারিখে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী এক্সপ্রেসওয়ের চারটি লেন দিয়ে মোট ৬ হাজার ৭৬৩টি গাড়ি চলাচল করেছে। গতকাল টোল পরিশোধকারী ৬ হাজার ২৭২টি গাড়ি থেকে সিডিএ’র আয় হয়েছে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ২৩০ টাকা। একই দিন টোল পরিশোধ না করা ৪৯১টি গাড়ির বাবদে সংস্থাটি প্রায় ৩৮ হাজার ১৪২ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। যা মাসের হিসাবে প্রায় ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৭৫ টাকা ক্ষতি।

এ ব্যাপারে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র নির্বাহি প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান চাটগাঁ নিউজকে বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় বিমানবাহিনী ঘাঁটি, নৌবাহিনী ঘাঁটি, বিমানবন্দর রয়েছে। প্রতিনিয়ত এসব সংস্থার অনেক গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছেন। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গাড়ি তো রয়েছেই। এরা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছেন অথচ টোল না দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার টোল আদায়ের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে নেয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, হিসাব করলে দেখা যাবে, বছর শেষে অপরিশোধিত টোল বাবদ কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি। কিন্তু সিডিএকে তো প্রকল্প বাবদ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। যারা টোল পরিশোধ করছেন না তারা যদি সচেতন দেশপ্রেমিক হন, তাহলে এ সমস্যা মিটে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সিডিএ’র সিস্টেম এনালাইজার মো. মোস্তফা জামাল বলেন, টোল পরিশোধ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। এক কোটি দামের গাড়িতে চড়েন কিন্তু ৮০ টাকা টোল দিতে পারেন না। টোল মওকুপের জন্য পরিচিতজনকে ফোন করে তদবির করেন। ‘আমরা বিশিষ্ট নাগরিক, এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে আমাদের টোল দিতে হয় না’- এমন মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত, ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকায় নির্মিত শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গত বছর ১৯ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টোল আদায় শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে নির্ধারিত টোল আদায়ের হার পরিবর্তনের জন্য ওই বছর ৩ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে সিডিএ চিঠি পাঠায়। চিঠির প্রেক্ষিতে ২৭ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় টোলের হার চূড়ান্ত করে।

চূড়ান্ত হওয়া টোলের হার অনুযায়ী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৩০ টাকা, কার ৮০ টাকা, জীপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ও ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যানের জন্য ৪৫০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top