চাটগাঁ নিউজ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে নান্দনিক, সবুজ শ্যামল ও ব্রিটিশ আমলে নির্মিত টাইগারপাস থেকে কদমতলী পর্যন্ত সড়কটির নাম ইউসুফ চৌধুরী সড়ক। পাহাড়ের বুক চিরে চলে যাওয়া সড়কটি নামের চেয়ে গাছের জন্য বেশি পরিচিত। এর প্রশস্ত ওপরের লেন থেকে নিচের লেন বেশ নিচুতে বলে এটিকে দ্বিতল সড়কও বলে থাকেন কেউ কেউ। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ করতে গিয়ে এই সড়কটির অর্ধশত গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
ইতিমধ্যে সবুজে ঘেরা সিআরবি এলাকার গাছগুলোতে লাল রং ও নাম্বার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৪৬টি গাছ কাটার জন্য অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ। রেলওয়ে ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির অপেক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ। এদিকে গাছ কেটে র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগে ক্ষোভ জানিয়েছে নগরবাসী এবং পরিবেশবাদীরা। র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন। আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সিআরবিতে র্যাম্প নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেছেন প্রকল্প পরিচালক এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, ‘কোনো ধরনের শতবর্ষী গাছ কাটা যাচ্ছে না। ছোটখাট ৪৪টি গাছ কাটা যাচ্ছে। গাছগুলো কাটা না গেলে এ র্যাম্প বাস্তবায়ন করতে পারব না। সেজন্য আমরা বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। বন বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে। গাছগুলো কাটা না যাওয়ার জন্য রাস্তার পাশে জায়গা চেয়ে আমরা রেলওয়েকেও চিঠি দিয়েছি। রেল থেকে জায়গা পাওয়ার পর আমরা কাজটি শুরু করবো।’
তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তা আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এ গাছগুলো রেখে কিভাবে কাজ করা যায় তার লে-আউট প্রণয়ন করেছি আমরা। আসলে শতবর্ষী কোন গাছ কাটা হচ্ছে না। ছোটখাটো যে গাছগুলো কাটা যাচ্ছে, যদি আমরা র্যাম্পটা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে এর চেয়ে বেশি গাছ লাগাবো।
এসময় প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে র্যাম্প তৈরির স্থানটি পরিদর্শনে আসেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান। সিডিএ বোর্ড সদস্য হিসেবে থাকা এ প্রকৌশলীও গাছ কাটার বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গাছ ছোট হলেও একটি আবেগ তো আছে। চট্টগ্রামে অন্যতম সুন্দর জায়গা এটি। এটি আমাদের জন্য একটি প্রকৃতির উপহার। আজকে আমরা সরেজমিনে সবাই মিলে দেখলাম। প্রায় ৪৪টা গাছ এখানে কাটা পড়ছে। উনারা (সিডিএ কর্মকর্তারা) যেটা বলছেন, র্যাম্পের প্রস্থ কমিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। তারপরও এ গাছগুলো থাকবে না। এখন যে সৌন্দর্য আছে সেটাও নিশ্চয় আর থাকবে না।
আবার যদি অন্যদিকে চিন্তা করি, র্যাম্প না হলে নিউমার্কেট, ফিরিঙ্গিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের যে বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবে না। যদি উঠতে হয় তাহলে জিইসি মোড় কিংবা আগ্রাবাদ থেকে উঠতে হবে। আমাদের এখন ভেবে চিন্তে দেখতে হবে আমরা এখন কোনটা নেব। এ ধ্বংসটাকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে কিছু করা যায় কিনা। আর যদি করা না যায় তাহলে আমার পরামর্শ হলো, এই র্যাম্প এখানে না হোক। আমাদের সৌন্দর্য থাকুক। আমাদের গাছ থাকুক। আমাদের সিআরবি থাকুক।
এদিকে টাইগারপাস-সিআরবির শতবর্ষী গাছ কেটে র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে সিডিএ চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাত করেছে চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ডক্টর অনুপম সেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
এসময় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও পরিবেশকর্মী কায়সার আলী চৌধুরী চাঁটগা নিউজকে জানান, আমাদের একটাই দাবি ছিল যে, অন্যান্য জায়গায় র্যাম্প হোক কিন্তু টাইহারপাসে যাতে কোন র্যাম্প না হয়। অনুপম সেন স্যারও বারবার র্যাম্প নির্মাণ না করার কথা বলেছেন। সিডিএ বলেছে, তারা নকশা পরিবর্তন করবে। কয়েকটি ছোট ছোট গাছ কাটা যাবে, শতবর্ষী কোন গাছ কাটা পড়বেনা। সবমিলিয়ে আপাতত র্যাম্প নির্মাণের কাজ স্থগিত বলা যায়।
উল্লেখ্য, সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন চট্টগ্রামের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১৫টি র্যাম্প নির্মাণের কাজ চলমান আছে। আগামী মাসে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মানুষের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা আছে। উন্নত জীবনের জন্য যেমন এক্সপ্রেসওয়ের দরকার তেমনি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গাছগাছালিরও দরকার আছে। তাই বলে নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবির এই সবুজ ধ্বংস করে গাছ কেটে এমন উন্নয়ন সাধারণ মানুষে চাইনা। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের দাবি, শতবর্ষী এসব গাছ না কেটে কিভাবে এক্সপ্রেসওয়ে সচল রাখা যায় এবং র্যাম্প নির্মাণ করা যায় সেটা সিডিএর ভাবা উচিত।
চাটগাঁ নিউজ/এসবিএন/এসএ