উজ্জ্বল দত্ত: ম্যানুয়াল পরিচ্ছন্নতায় কাজের চাপ কমাতে মেশিনে ধুলোবালি পরিস্কারের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ছয়টি সুইপিং গাড়ি রয়েছে। কিন্তু কোটি কোটি টাকায় কেনা মেশিনগুলোর অবস্থা যেন ‘শখের তোলা ৮০ টাকা’। সুইপিং গাড়িগুলো উন্নত দেশের কম ধুলোবালির রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্নতায় উপযোগী। কিন্তু এদেশের রাস্তাঘাট পরিস্কারের উপযোগী নয়। রাস্তায় নামার কিছুক্ষণ পরপরই সেগুলো অকেজো হয়ে যায়। আবার যন্ত্রগুলোর খোরাকও অনেক বেশি। কোনটা ঘণ্টায় খায় ৭/৯ লিটার অকটেন, ডাবল ইঞ্জিনের গাড়িগুলো খায় ২৫/৩০ লিটার ডিজেল। এমন মেশিন ব্যবহারের চেয়ে ম্যানুয়াল কার্যক্রমকে সাশ্রয়ী মনে করে সেগুলোকে স্টোরেই ফেলে রেখেছে চসিক। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে সুইপিং গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
চসিক সূ্ত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের জন্য ২০টি সুইপিং গাড়ি কেনা হয়। ইতালি থেকে প্রতিটি গাড়ি দেড় কোটি টাকা মূল্যে কেনা হয়েছে। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেগুলো সিটি কর্পোরেশনে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে তিনটি গাড়ি।
এ তিনটি ছাড়াও চসিকের কাছে আরও তিনটি সুইপিং গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ৫০ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে চসিক একটি গাড়ি কেনে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ৮ জুন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চসিক দুটি সুইপিং গাড়ি পায়। এসব গাড়ির প্রতিটির মূল্য ৮৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে দুইটি গাড়ির দাম দাঁড়ায় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
স্টোরে ফেলে রাখার কারণ
চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রথম কিছুদিন এসব গাড়ি ব্যবহার করা হলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই গাড়িগুলোতে সমস্যা দেখা দেয়। এর কারণ হচ্ছে- গাড়িগুলো বাংলাদেশের সড়ক-ফুটপাতের ভারী ধুলোবালি ও কঠিন আবরণ পরিস্কারের উপযোগী নয়। এগুলো উন্নত দেশের পিচঢালা সড়কের হালকা ধুলোবালি পরিষ্কারের উপযোগী। দেখা গেছে, গাড়িগুলোর ভ্যাকুয়াম পাইপগুলো মাত্র পাঁচ/১০ মিনিটের মধ্যেই ব্লক (বন্ধ) হয়ে যায়। ভ্যাকুয়াম পাইপ পরিস্কার করতে গেলে আবার লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। এতে করে চসিকের পরিচ্ছন্নতা ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে, ছয়টির মধ্যে সুইপিংয়ের দুটি গাড়িতে আছে ডাবল ইঞ্জিন। ডাবল ইঞ্জিনের গাড়িগুলোতে সুইপিংয়ের সময় ২৫/৩০ লিটার ডিজেল খরচ হয়। জ্বালানি খরচ, মেশিনারি খরচের তুলনায় এগুলোর আউটপুট একেবারে কম।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা বলেন, সুইপিং গাড়িগুলো দিয়ে রাস্তা পরিস্কারের সময় উল্টো আরও ধুলোবালি ওড়াওড়ি করে। এতে করে পরিচ্ছন্নতার চেয়ে পরিবেশ নষ্ট হয় বেশি। তাছাড়া এগুলো খুব সেনসেটিভ মেশিন। বাংলাদেশের জন্য উপযোগী নয়। অত্যাধিক তেল খায়। তাই স্টোরে ফেলা রাখা হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ