আনোয়ারা প্রতিনিধি : উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে ৪ বাংলাদেশি যুবককে লিবিয়ায় নিয়ে সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের হাতে তুলে দিয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা।
লিবিয়ায় দালাল চক্রের ফাঁদে পড়েছে আনোয়ারার ৪ যুবক। উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে তাদেরকে সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের হাতে তুলে দিয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা। মাফিয়াদের হাতে জিম্মি যুবকদের নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ চাইছে তারা।
মুক্তিপণ আদায়ের বুধবার (২৭ মার্চ) সময় বেঁধে দিয়ে অপহরণকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন টাকা না দিলে একজন করে লাশ পড়বে। বিকেলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অপহৃতদের স্বজনরা।
অপহৃত চার যুবক হলেন- আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. ওয়াসিম (২২), মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন (১৯),আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম (১৯) ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন (২০)। তারা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা।
স্বজনরা জানান, গহিরা এলাকার মো. হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম গত দুই মাস আগে স্থানীয় কয়েকজন যুবককে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ার হাসপাতালে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেন। এতে মো. ওয়াসিম, বোরহান, জাবেদুর রহিম ও নাঈম উদ্দিন চার লাখ বিশ হাজার টাকা করে জহিরুল ইসলামকে মোট ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে লিবিয়ার উদ্দেশ্য বের হন তারা।
জহিরুল তাদেরকে টুরিস্ট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে গিয়ে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজান নামে এক লোকের হাতে তুলে দেন। মিজান তিনদিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিয়ে পেলে। সাতদিন পর দুবাই থেকে মিশর হয়ে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে তাদের অন্য দালালের হাতে বিক্রি করে দেন মিজান।
লিবিয়ায় তাদের মাসখানেক টুকটাক কাজ দেওয়ার পর গত ২৫ মার্চ তাদের বন্দি করে রাখেন। ২৬ মার্চ পরিবার ও স্বজনদের কাছে নির্যাতনের কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ ও অডিও বার্তা পাঠানো হয়। এতে প্রতিজন থেকে ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা প্রদানের জন্য ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি ব্যাংক হিসাব নম্বরও দেয়া হয়। টাকা দিতে অপারগ হলে তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়। বর্তমানে ৪ যুবক লিবিয়ার একটি গোপন স্থানে বন্দি জীবনযাপন করছেন।
বোরহান উদ্দিনের ভাই সাহাব উদ্দিন বলেন, বুধবার ৩টার মধ্যে চারজনের জন্য চার লাখ টাকা পাঠাতে বলেছে। বিকাল থেকে আমার মুঠোফোনের ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করছে টাকার জন্য। তাদের নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও পাঠাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, উপজেলা রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার চার যুবককে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবির বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ