নিজস্ব প্রতিবেদক : পরিবারের সদস্যদের সাথে ডিএনএ না মিলিয়ে মরদেহ হস্তান্তর করায় ইমেজ সংকটে পড়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পিতা পরিচয়দানকারী ব্যক্তির কাছে মরদেহ হস্তান্তর ও দাফনের পর পিবিআই’র ছায়া তদন্তে বেরিয়ে এলো সত্য ঘটনা। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ মে) জানা গেল, আব্দুর রহিম পরিচয়ে যাকে দাফন করা হয়েছে তিনি আসলে আবদুর রহিম নন। আবদুর রহিম এখনো জীবিত।
জানা যায়, শনিবার (৩ মে) বিকাল ৫টার দিকে কোতোয়ালী থানার সিঅ্যান্ডবি পোল সংলগ্ন রুমঘাটার পেছনের খাল থেকে এক ব্যক্তির হাতবাঁধা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রোববার উবায়দুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি মরদেহটি তার ছেলে আবদুর রহিমের বলে দাবি করেন। নিয়ম অনুযায়ী মরদেহের সুরতহাল, চমেক হাসপাতাল কর্তৃক ময়নাতদন্ত শেষে কোতোয়ালি পুলিশ উবায়দুল্লাহর হাতে মরদেহ হস্তান্তর করেন। উবায়দুল্লাহ ভোলায় নিয়ে গিয়ে আবদুর রহিমকে দাফনও করে ফেলেন।
তবে দাফন পরবর্তীতে হঠাৎ করে নিহত আবদুর রহিমের মোবাইলটি সচল হয়। সচল হওয়া মোবাইল ট্র্যাক করে অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কয়েকদিন আগে মোবাইলের সূত্র ধরে উবায়দুল্লাহর ছেলে আবদুর রহিমকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। একই সাথে তার বাবা উবাইদুল্লাহকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
মরদেহ গ্রহণের সময় গণমাধ্যমের কাছে উবায়দুল্লাহ বলেন, ছেলে আবদুর রহিম চট্টগ্রামে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। পহেলা মে সকালে একটি ফোন পেয়ে বের হয়ে কর্মস্থল থেকে নিখোঁজ হন। আমার ছেলে আবদুর রহিম সপ্তাহখানেক আগে মোবাইলে গেমস খেলে একটি আইফোনসহ চার লাখ টাকা জিতেছে বলে আমাদেরকে বলেছিল। কিন্তু এই পুরস্কার নেয়ার সময় নাকি ওদেরকে ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। সেই টাকা জোগাড় করতে রহিম অনেকের কাছ থেকে ঋণ করেছে। কিন্তু পুরস্কারের বিষয়টি ছিল প্রতারণা। আমার ছেলের থেকে তারা টাকা নেয়ার পর ওই পুরস্কার আর দেয়নি। এদিকে, পাওনাদারের টাকা ফেরত দেয়ার টেনশনে আবদুর রহিম নিখোঁজ হয়ে যান। উবাইদুল্লাহর ধারণা ছিল, তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের পর পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। এদিকে, দাফনের পর আবদুর রহিমের মোবাইলটি চালু হলে আমরা অনুসন্ধান শুরু করি। পরে আবদুর রহিমকে পাওয়া যায়। পাওনা টাকা না দিতে পেরে তিনি মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলেন বলে জানান।
তার বাবা উবায়দুল্লাহ আমাদেরকে বলেন, নিখোঁজ থাকায় এবং চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মরদেহটি তার ছেলের বলে মনে হয়েছিল। এছাড়া তার আর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তদন্তে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। মরদেহের ডিএনএ সংরক্ষণ করা আছে। দাবিদার পাওয়া গেলে ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম জানান, উদ্ধার মরদেহটি আবদুর রহিমের নয়। আমরা সেটা উদঘাটন করেছি। এ সত্য উদঘাটনে গণমাধ্যমও ভূমিকা রেখেছে। পিবিআই তদন্ত সহায়তা করেছে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ