চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : সমুদ্রভিত্তিক পণ্য পরিবহনে আরও একটি বড় জাহাজের মালিক হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের বহরে যুক্ত হলো নতুন কেনা এই জাহাজটি। ফলে এই শিল্প গ্রুপ অর্জন করলো শততম জাহাজের মালিকানা। বিশ্বের এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ওড়াবে লাল-সবুজের পতাকা।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানরত এমভি নর্ড প্যাসিফিক নামে জাহাজটির নতুন নামকরণ করা হচ্ছে এমভি জাহান-ওয়ান। যা এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।
বুধবার (১২ জুন) জাহাজটি পরিদর্শন করেছেন নৌবাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ, অর্থলগ্নিকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা, বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা, শিপ ক্লাসিফিকেশন সার্ভেয়ারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, এমভি নর্ড প্যাসিফিক নামে জাহাজটি পাঁচ বছর আগে পানামায় নিবন্ধন পেয়েছিল। ৬১ হাজার ২২১ মেট্রিকটন পণ্য পরিবহনে সক্ষম জাহাজটি। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এস এস পাওয়ার লিমিটেডের ৫৯ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে জাহাজটি গত ২৬ মে ইন্দোনেশিয়ার মুয়ারা পান্তাই বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। গত ৭ জুন জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে।
কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের যে বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। কেএসআরএম গ্রুপের কাছে মালিকানা হস্তান্তরের পর এখন এমভি জাহান-ওয়ান নামে জাহাজটির নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।’
জানা গেছে, জাহাজটি কেনার পর ইতোমধ্যে এসআর শিপিং লিমিটেড স্থায়ী নিবন্ধনের জন্য নৌবাণিজ্য অধিদফতরে আবেদন করেছে। বুধবার (১২ জুন) নৌবাণিজ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জাহাজটি পরিদর্শন করেন। স্থায়ী নিবন্ধন পাবার পর লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে জাহাজটি চলবে সমুদ্রপথে।
নৌবাণিজ্য অধিদফতরের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ হিসেবে ‘জাহান ১’ এর স্থায়ী নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আমরা পরিদর্শনে এসেছি। নিবন্ধন সনদ পেলে জাহাজটি বাংলাদেশি পতাকা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলতে পারবে। অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ সম্ভব হবে। বাংলাদেশি নাবিকদের কর্মসংস্থান হবে।
জানা গেছে, নতুন আরেকটিসহ কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানায় এখন জাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫টিতে। জাহাজ ব্যবসায় কেএসআরএম’র প্রায় সমকক্ষ মেঘনা গ্রুপ। তাদের মালিকানায়ও আছে ২৫টি জাহাজ। এছাড়া আকিজ গ্রুপের ১০টি, এইচআর শিপিংয়ের ৮টি, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৭টি, ভ্যানগার্ডের ৬টি, বসুন্ধরা গ্রুপের ৬টি জাহাজসহ সব মিলিয়ে মোট ১০০টি জাহাজ আছে।
নৌবাণিজ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র গত ৫ বছরেই নতুন-পুরাতন ৭১টি জাহাজ কিনেছেন বাংলাদেশের শিপিং ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে ৯টি জাহাজ একেবারেই নতুন।
বাংলাদেশের মালিকানাধীন শততম জাহাজের নিবন্ধন পেতে বেশ কিছুদিন ধরে শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে আসছিল। মেঘনা গ্রুপ ‘মেঘনা সেঞ্চুরী’ নামে, এসআর শিপিং ‘জাহান-ওয়ান’ নামে এবং ভ্যানগার্ড গ্রুপ ‘রয়েল আরাকান’ জাহাজ নামে আলাদাভাবে নিবন্ধনের আবেদন করে।
তবে এমভি জাহান-ওয়ান বাংলাদেশি সীমানায় নিয়ে আসার কারণে এ প্রতিযোগিতায় কেএসআরএম গ্রুপ অনেকটাই এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন নৌবাণিজ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বহরে জাহাজ কমে যাওয়ার পর একসময় বিদেশি জাহাজেই বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা হতো। ২০১৯ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাহাজ আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ফলে বাংলাদেশি বড় শিল্পগ্রুপগুলো ওশান গোয়িং জাহাজ কিনতে থাকে। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে আমদানি-রপ্তানি খাতে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ