লালদিঘীর বৈশাখী মেলায় দেশীয় পণ্যের সমাহার, জমে উঠেছে বেচাকেনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী মেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বেশ জমে ওঠেছে। আজ অনুষ্ঠিত হয়েছে খেলা। এবার জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলায় অন্যান্য বারের চেয়ে মানুষের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামীকাল শনিবারও সরকারি ছুটির দিন থাকায় মেলায় বিকিকিনি বেশি হবে আশা দোকানিদের।

দেখা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৮টার পর থেকে লালদিঘীর পাড় ও সংলগ্ন এলাকায় বিক্রেতারা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাত হওয়ায় নানা বয়সী মানুষ কর্মব্যস্ততা শেষে মেলায় ভিড় করতে থাকে।

মেলার পণ্য সামগ্রী
গৃহস্থালি পণ্য, শিশু-কিশোরদের খেলনা, গৃহসজ্জার জিনিস, তৈজসপত্র, ঝাড়ু, দা, বটি, ছোরা, কুড়াল, আসবাবপত্র, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্র, বাদ্যযন্ত্র, মন্ডা-মিঠাই থেকে শুরু করে কী নেই এই মেলায়! ক্রেতারা দরদাম করে দেখেশুনে কিনছেন পছন্দের পণ্যটি।

কর্মস্থল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে ঝাড়ু কিনে নিচ্ছিলেন পাথরঘাটার বাসিন্দা হোসনে আরা। তিনি বলেন, প্রতিবছর আশায় থাকি বলীখেলা আসবে। আমরা ছোটবেলা থেকে এ বলীখেলা, মেলা দেখে বড় হয়েছি। কিশোর বয়সে দলবেঁধে পাড়া-প্রতিবেশিরা মিলে মেলায় ঘুরতাম, সদাই করতাম। কত কিছুই না করতাম এ মেলায়। এ মেলায় এমন কিছু জিনিস পাওয়া যায়, যা অন্যান্য সময় হয়তো আপনি পাবেন না। পেলেও বাজার থেকে খুঁজে খুঁজে বেশি দামে কিনতে হবে। এ মেলা আমাদের প্রাণের মেলা।

সাত বছর বয়সী ছেলে নিলয়কে কাঁধে করে নিয়ে মেলা ঘুরছেন অনন্ত শর্মা। ছেলের হাতে বেলুন, বাবার হাতে ছেলের জন্য কেনা ঢোল। তিনি বলেন, ছোটবেলায় আমার দাদা আমাকে কাঁধে করে নিয়ে মেলায় আসতেন। জব্বারের বলীখেলা শুরু হলে মনের মধ্যে সেসব স্মৃতিগুলো ভিড় করে। নিলয় অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছে। তাই তাকে কাঁধে তুলে নিয়েছি। এবার মেলায় প্রচুর মানুষ আসছে। বন্ধের দিন পড়াতে লোক সমাগম বেশি হয়েছে।

বাঁধ ভাঙা মানুষের উপস্থিতি
এবার মেলায় প্রচুর লোকজনের উপস্থিতি রয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৪টায় খেলা শুরু হলে লালদিঘীর মাঠ কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে। ঢাক-ডাগরের বাদ্যের তালে শুধু যে বলীদের মন উত্তাল হয়ে উঠেছে এমনটা নয়। বাজনার তালে হাজার হাজার দর্শকের মনও উন্মাতাল হয়ে উঠে। মাঠে যত লোক তার ১০ গুণ লোক আশেপাশের এলাকায় ভিড় করেছে। সবাই খেলা দেখার জন্য উদগ্রীব। মাঠ ভর্তি হয়ে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একপর্যায়ে গেইট বন্ধ করে দেয়। তবে তা বেশিক্ষণ রাখা যায়নি। শত শত উৎসুক উন্মাতাল জনতাকে লালদিঘী মাঠের গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকতে দেখা গেছে।

বিক্রেতাদের অভিযোগ
মেলায় লোক সমাগম যেমন বাড়ছে তেমনি বেচাবিক্রিও বাড়ছে। তবে এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানামুখী হয়রানি। বিক্রেতাদের অভিযোগ, দফায় দফায় চাঁদাবাজি চলছে মেলায়।

মাটির তৈজসপত্র বিক্রেতা সাহাবুদ্দিন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ঘন্টায় ঘন্টায় গ্রুপ করে চাঁদা আদায় চলছে। লোকজন বাড়লেও আমাদের বেচাবিক্রি বাড়েনি। মেলা বসাতে পারবো কিনা তা নিয়েই সন্দেহ ছিল। তারপর কোনরকমে টুকটাক বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত থেকে। এখন চলছে চাঁদার ভোগান্তি। এই হয়রানি নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই।

পকেটমার-ছিনতাইকারীর উৎপাত
বলীখেলা শেষ হলে শুক্রবার পড়ন্ত বিকাল থেকে মেলায় ভিড় বাড়তে শুরু করে। তবে এ ভিড়কে কাজে লাগিয়ে পকেটমার, ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে লোকজনের কাছ থেকে সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা-পয়সা, মোবাইল, মানিব্যাগ। ঈগল পাখির মত ছোঁ মেরে মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। এদিকে পকেটমার, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে ভুক্তভোগী মানুষগুলো টাকা পয়সা হারিয়ে আহাজারি শুরু করছে।

শুক্রবার রাতে মেলায় হ্যান্ডব্যাগ ছিনতাইয়ের কবলে পড়া ছেনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অফিস ছুটি হলে অফিসের গাড়িতে আন্দরকিল্লা নেমে আমরা কয়েকজন সহকর্মী মেলায় ঢুকি। কসমেটিকসের দোকানে চুড়ি, ক্লিপ, কানের দুলসহ বিভিন্ন আইটেম দেখছিলাম। হঠাৎ করে চার-পাঁচজন ছেলে আমাদের গা ঘেঁষে শিশুদের বন্দুক ,পিস্তল দরদাম করছিল। কিছুক্ষণ পর আমি দোকানিকে টাকা দিতে গেলে দেখি আমার ব্যাগ নেই। ব্যাগের হাতল কেটে কখন যে মেরে দিয়েছে বুঝতেই পারিনি। ব্যাগে আমার আইডি কার্ড ,মোবাইল, টাকা-পয়সা ছিল।

তিনদিনের বৈশাখী মেলার আগামীকাল শনিবার শেষ দিন। বেসরকারি কর্মজীবীদের ছুটি না থাকলেও সরকারি কর্মজীবীদের ছুটি রয়েছে। তাছাড়া মেলার শেষ দিন বলে কথা! শনিবারও মেলায় লোক সমাগম বাড়বে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top