লন্ডনে প্রবাসীদের প্রশংসায় ভাসছেন চাটগাঁইয়া সন্তান মনোয়ার

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: লন্ডনে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় নেমে প্রবাসীদের প্রশংসায় ভাসছেন চট্টগ্রামের মেধাবী সন্তান ব্যারিষ্টার মনোয়ার হোসেন। বৃটেনের আইনে ‘বেআইনিভাবে থাকার পর রেসিডেন্ট পারমিট পেতে হলে আবেদনকারী ২০ বছর পূর্ণ করতে হবে’, এমন একটা ঘটনায় সাড়ে ১৯ বছরের মাথায় গ্রেফতার হন এক বাংলাদেশী।

আর মাত্র ৫ মাস হলে বৈধতা মিলতো তার। কিন্ত এত বছর পর গ্রেফতারের কারণে পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। খবর পেয়ে দিশেহারা প্রবাসীর পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন ব্যারিস্টার মনোয়ার। পুরো টিমকে কাজে লাগিয়ে শেষ পযর্ন্ত সফলভাবে শেষ করেন মিশন। প্রবাসীর পরিবারের মুখে হাসি ফুটে। ব্যারিষ্টার মনোয়ারও কাজটি করতে পেরে স্বস্তি পান।

ব্যারিষ্টার মনোয়ার তাঁর ফেসবুক পেইজে উল্লেখ করেন— সাড়ে ১৯ বছর ইংল্যান্ডে বেশীরভাগ সময় অনুমতি ছাড়া থাকার পরে এক প্রবাসী (গোপনীয়তার কারণে বলছিনা কে বা কোন দেশের) গ্রেফতার হলেন। আটক থাকলেন কয়েক সপ্তাহ ধরে, সব আবেদন খারিজ হলো। গত ২৯ জানুয়ারি ছিল তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ফ্লাইট। প্রায় শেষ মুহূর্তে আমার চেম্বারে তার আত্মীয়রা মামলাটি নিয়ে এলেন। ব‍্যর্থ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের বিগত কনজারভেটিভ সরকারের রোয়ান্ডা পাঠানোর নীতির পরিবর্তে লেবার পার্টি সরকার এদেরকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারই প্রতিফলন এটি।আমেরিকাতেও এই অবস্থা। তাই মামলাটি একটু চ‍্যালেঞ্জিং বটে।

এ ধরনের অগণিত মামলায় এর চেয়ে বেশি জটিল কাজও করেছি, অতি শেষ মুহূর্তে ফ্লাইটের দরজা বন্ধের পরেও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মতো অবস্থায় প্রবাসীকে মুক্ত করে পরে এই দেশটিতে আইনগতভাবে স্থায়ী করার জন্য আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁদের জীবন বদলে দিতে হোম অফিসে আবেদন, নিবেদন, উচ্চ আদালতে যাওয়াসহ সর্বোচ্চ সবকিছু করতে হাল ছাড়িনি। তবে কখনো কাউকে সফলতার কোন শতভাগ নিশ্চয়তা দিইনি, সবসময় বলেছি, কে কোথায় স্থায়ী হবেন বা তার পরিবার ও ভবিষ্যৎ বংশধররা এখানেই বিস্তৃত হবে কিনা এসব কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল।

একটি মামলা মানে একটি জীবন শুধু নয়, এ সাথে তার পরিবারের ভবিষ্যৎও নির্ভর করে। অনেক সময় আইনী সহায়তা দিয়েছিলাম এমন বাংলাদেশ ও বিভিন্ন দেশের অনেকেই এসে অনেক বছর পরে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করতে আসেন বা কল করেন; এদের অনেকেই পেশাগত বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ সফল হয়েছেন, সন্তানরা ভালো করছে-ইংল্যান্ডের মতো দেশে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছে, কেউ বা বিশ্বসেরা অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী ইত্যাদি হচ্ছে । এরাই আবার নিজেদের পরিবার, পরিজন ও স্বদেশে প্রবাসে সমাজের মানুষের জন্য সাহায্য করে । ভাবলে মনে হবে এটা যেন একটা সীমাহীন নেটওয়ার্ক। এসব শুনে অনেক ভালো লাগে, নিজের পেশাগত জীবনের যথার্থতা সফলতা এখানেই যেন দেখতে পাই ।

যাইহোক, আমি একজন আইনজীবী হিসাবে শেষ লড়াই করে যাই তার জন্য। একেবারে শেষ মুহূর্তেও সফলতা আসতেও পারে। সন্ধ্যা ৬টায় হোম অফিস থেকে দেশে ফেরত পাঠাবে। আর মাত্র পাঁচ মাস পরে ২০ বছর থাকার আইনে অনুমতি পেতেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বটে। এর আগে মাত্র কয়েক বছর থাকার পরেও অনেকের রেসিডেন্স পারমিট হয়েছে, তবে প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকে। রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলা সফল হলে সাথে সাথেই ৫ বছরের রেসিডেন্স পারমিট চলে আসে। কিন্তু এই মক্কেলের ক্ষেত্রে হোম অফিস মানতে নারাজ।

তারা বললেন, ২০ বছর আইনে বেআইনিভাবে থাকার পর রেসিডেন্ট পারমিট পেতে হলে আবেদন করার ২০ বছর পূর্ণ করতে হবে, সেটি এখনও হয়নি, কাজেই তাকে ফেরত পাঠাতে আইনি কোনও বাধা নেই, তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন ও আপিল, নতুন আবেদন ইত্যাদি আগেই খারিজ হয়েছিল। আসলেই খুব চ‍্যালেন্জিং এ কাজটা।

আমার লীগ‍্যাল টিম নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করলাম। বিকালে ওনার ফ্লাইট বাতিল হলো শেষ পর্যন্ত। এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে ম‍ুক্ত হলেন তিনি, তার বৃদ্ধা মা ও দেশ বিদেশে পরিবারের সবাই। এই লোকটা হয়তো এত বছর অনেক পরিশ্রম করে সরকারি অনুমতির বাইরে দিনরাত বিভিন্ন কাজ করে উপার্জন করা অর্থ তার দেশের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের সাহায্য করতে পাঠিয়েছেন যেভাবে এ ধরনের অনেকেই করে থাকেন। হয়তো তাদের প্রার্থনা তার সহায়ক হতে পারে। ইংল্যান্ডের মতো দেশে অনেক প্রবাসীদের জীবনের একটা চিত্র তুলে ধরতে পাঠকদের জন্য এটুকু লিখলাম। আর বলতে চাই, নিজ দেশের সবখানে তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান যেন থাকে।

ব্যারিস্টার মনোয়ারের এই স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে অনেকে প্রশংসনীয় মন্তব্য করেন নেটিজেনরা।

ব্যারিস্টার সোহরাব হোসেন নামে একজন লেখেন— ‘আমি বিশ্বাস করি আপনি এটা পারেন। আপনার ফার্মে কাজ করার সুবাদে আপনার কাজের দক্ষতা উপলব্ধি করার সুযোগ হয়েছিল।’ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ নামের একজন লেখেন, ‘এত মানুষের অবদান অস্বীকার করুক বা নাই করুক, একজন ভালো মানুষের দোয়ায় আপনার জীবন অনেক বদলে দিতে পারে মহান রাব্বুল আলামিন, এত সফলতার পুরস্কার আল্লাহ পাক আপনাকে দিবেন এক দিন, সেই দিন মনে হয় আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না ইনশাআল্লাহ।’

নুরুল আবসার নামে একজন লিখেছেন— ‘ অসাধারণ দাদা। আপনার অবদান অসামান্য। যত ভালো কাজগুলো করে যাচ্ছেন জীবন ব্যাপি। মানবতা ও মনুষ্যত্বের মিশেলে আপনার দায়িত্ব পালন মানুষকে উৎসাহিত করে ভালো কাজ করতে। বেঁচে থাকুন শতোর্ধ বছর চট্টগ্রামের গর্বিত সন্তান হয়ে মানুষের মাঝে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে যান।’

জাফরিন জাকারিয়া নামের আরেকজন লেখেন, ‘স্যার এর ফার্ম হল অ‌তি দক্ষ আর তারা টাকার জন্য পরোয়া ক‌রেন না যেখা‌নে অন্য ফার্ম টাকা না দি‌লে আবেদন প্রক্রিয়া ক‌রেনা সেই জায়গায় স্যারের দিকটা হল আগে সুন্দর ভা‌বে কাজ। এমন‌কি আবেদন করার মাস পার হল স্যার কল দি‌য়ে টাকার কথা ব‌লেন না । আমি নিজ থে‌কে ব‌লি স্যার আপনা‌দের পেমেন্ট দি‌তে চা‌চ্ছিলাম।’

কাওকাব গুলসান নামের একজন ইংরেজিতে লিখেছেন, You’re a very kind hearted empathetic individual. You take every case with sympathy and compassion. I wish you all the very best and all prayers are for you. If I visit London again then definitely meet you up and say hello. By the way two of my children are doctors and by the grace of Almighty Allah they are doing good. All these happened because of you. I am eternally grateful to you. May Allah give you longevity and good health to help thousands of people who want to get a better life in here.

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন/জেএইচ

Scroll to Top