মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব: উত্তর আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, রোজা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অনাহার-অর্ধাহারের এই চর্চা শরীর ভালো রাখে। রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, প্রতিটি বস্তুর জাকাত আছে; শরীরের জাকাত রোজা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রোজার কিছু শারীরিক উপকারিতার কথা বলেছেন। বিশেষ করে রোজা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, পেটের স্বাস্থ্য ভালো হওয়া, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে, সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ইত্যাদি।
একাধিক সূত্র বলছে, আরব আমিরাত ও বাহরাইনের গবেষকরা ৯১টি গবেষণা একত্র করে দেখেছেন, রমজানের রোজায় রক্তে কোলেস্টেরল আগের তুলনায় ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশেরও তিনটি গবেষণা রয়েছে।
আরও জানা গেছে, ২০১৯ সালে লন্ডনের পাঁচটি মসজিদে একটি গবেষণা হয়। গবেষণার নাম ‘লন্ডন রামাদানস স্টাডি’। রমজানের আগে-পরে ব্লাড প্রেসার মেপে দেখা যায়, কোনো পরিবর্তন আছে কিনা? সেখানে দেখা গেল সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার তথা ব্লাড প্রেসারের ওপরের সংখ্যাটা কমেছে সাত মিলিমিটার মার্কারি আর দ্বিতীয় সংখ্যাটি কমেছে তিন মিলিমিটার মার্কারি।
ভারত, পাকিস্তান, কাতারসহ অন্যান্য দেশের আরও ৩২টি গবেষণা একত্র করে দেখা গেছে, রমজানের রোজায় ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে উন্নতি আসে ওজন না কমলেও। এ ছাড়াও রোজার নানাবিধ শারীরিক উপকারিতা আছে।
কিছু নিয়মনীতি অনুসরণ করলে রোজার শারীরিক সুফল এবং কল্যাণ অর্জন হয়। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং শিরা-উপশিরাগুলো সচল রাখতে খাবারের প্রয়োজন। তবে এই খাবারই যদি নিয়মিত এবং পরিমিত না হয়, তাহলে শরীরে শক্তি জোগানোর পরিবর্তে রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগের উপসর্গ ও কারণগুলো নবীজী (সা.) বহু বছর আগে বলে গেছেন। তিনি বলেন, রোগের কেন্দ্রবিন্দু হলো পেট, অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাস এড়িয়ে চলা রোগের আরোগ্যতা। বছরব্যাপী অপরিমিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরে যে অতিরিক্ত মেদ জমে থাকে তা রোজা রাখার ফলে দূরীভূত হয়। সময়মতো সেহরি খাওয়া যেমন সুন্নত, তেমনি সময়মতো ইফতার করাও সুন্নত। নবীজী (সা.) এমনই করতেন। তিনি বলেন, তোমরা সেহরি খাও; কারণ এতে বরকত রয়েছে। খেজুর দিয়ে ইফতার করা নবীজীর (সা.) সুন্নত। মোটকথা রোজার শারীরিক বেশ উপকারিতা রয়েছে। আছে সুস্থ থাকার মন্ত্রও। তবে কেউ যদি রোগী হয়, কোনো ডাক্তার যদি রোজা রাখতে মানা করেন, তাহলে সে কী করবে?
কোরআনুল কারিম বলছে, যে কেউ রমজান মাস পাবে, সে যেন রোজা পালন করে। আর যে রোগাক্রান্ত অথবা সফরে থাকে, সে যেন অন্য সময়ে আদায় করে নেয়। (সূরা বাকারা : ১৮৫)
কোরআনুল কারিম আরও বলেছে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টকর তা চান না। (সুরা বাকারা : ৮৫)
এই দুই আয়াত সামনে রেখে ইসলামি ফেকাহবিদদের অভিমত হলো, কেউ প্রকৃতপক্ষে রোগাক্রান্ত হলে, বিশেজ্ঞ দ্বীনদার ডাক্তার রোজা পালনে নিষেধ করলে, রোজা না রাখার অনুমতি আছে। এ ছাড়াও রোজা রাখলে রোগ প্রকট হবে বা সুস্থ হতে দেরির আশঙ্কা হলেও বিরত থাকতে পারবে। পরে সময়-সুযোগ করে কাজা আদায় করে নেবে। কাফ্ফারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আবার কেউ যদি শক্তিহীন বৃদ্ধ হয়, রোজা রাখায় সামর্থ্যবান না হয়, শরীরের ক্ষতি হয়, তার জন্যও রোজা না রাখার অনুমতি আছে। পরে যদি পালনের সুযোগ আসে, রোজা আদায় করবে। বার্ধক্য আরও বৃদ্ধি পেলে বা সক্ষমতা না এলে অবশ্যই কাফ্ফারা আদায় করবে। কাফ্ফারা মানে মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে পেট ভরে খানা খাওয়ানো বা সদকাতুল ফিতর পরিমাণ দান করা। শক্তিহীন বৃদ্ধের ছাড়ের অনুমতি প্রসঙ্গে কোরআনের ভাষ্য হলো- তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের প্রতি দয়াশীল। (সূরা নিসা : ২৯)
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। (সূরা বাকারা : ১৯৫)
কেউ রোগী না হয়ে রোগের ভান করলে, বৃদ্ধ সামর্থ্যবান হয়ে রোজা না রাখলে জঘন্য অপরাধ হবে। কবিরা গোনার শাস্তি হবে।
শিক্ষক : শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কোরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন