রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারালো বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক: শেষ ওভারে তৈরি হলো দারুণ এক নাটকীয়তা। জয়ের জন্য রান প্রয়োজন ৫টি। প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে দিলেন জাকের আলি অনিক। ৫ বলে প্রয়োজন তখন মাত্র ১ রান। কিন্তু দ্বিতীয় বলেই শানাকার স্লোয়ার অফকাটারে বোল্ড জাকের।

তৃতীয় বল মোকাবিলা করতে নামলেন শেখ মেহেদী। কোনো রান নিতে পারলেন না। হাই বাউন্সে আসা চতুর্থ বলটিতে পুল করতে চেয়েছিলেন মেহেদী। কিন্তু সেটি গিয়ে সোজা আশ্রয় নেয় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। কাল বিলম্ব না করেই রিভিউ চেয়ে বসেন লঙ্কান বোলার দাসুন শানাকা। রিভিউতে দেখা যায় মেহেদীর ব্যাট ছুঁয়ে গেছে বলটি। সুতরাং, আউট।

চরম নাটকীয়তায় শেষ মুহূর্তে ম্যাচ জমে ওঠে তখন। ২ বলে প্রয়োজন ১ রান। ব্যাট হাতে উইকেটে আসেন নাসুম আহমেদ। এবার শানাকার করা পঞ্চম বলটি পয়েন্টে ঠেলে দিয়েই সিঙ্গেলস বের করে বাংলাদেশকে জয় উপহার দেন নাসুম।

সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে ১ বল হাতে রেখে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে থাকলো টাইগাররা।

এর আগে ১৬৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত ব্যাট করেন সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। ৬১ রান করেন সাইফ ও ৫৮ রান আসে হৃদয়ের ব্যাট থেকে।

অথচ এই শ্রীলঙ্কার কাছেই গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা। ওই ম্যাচে লঙ্কানদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি লিটন দাসের দল। আবার আফগানিস্তানকে শ্রীলঙ্কা হারানোর ফলে বাংলাদেশ উঠতে পেরেছে সুপার ফোরে।

তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। তার ব্যাটে দীর্ঘদিন রান নেই। আগের সেই মারকাটারি ব্যাটিংও নেই তার হাতে। এ কারণে তুমুল সমালোচনা সইতে হচ্ছিল তাকে। তবে টিম ম্যানজেমেন্টকে ধৈর্য ধরে তাকে সুযোগ দিয়ে যেতে হয়েছে।

অবশেষে সেই সুযোগের প্রতিদান দিতে পারলেন ডানহাতি এ ব্যাটার। ৩৭ বলে ৫৮ রান করে বাংলাদেশের জয়ে অন্যতম সেরা ভূমিকা রাখেন তিনি। ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কার মার মারেন তিনি। এটি তার টি-২০ ক্যারিয়ারে চতুর্থ অর্ধশতক।

তবে বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন ওপেনার সাইফ হাসান। পারভেজ হোসেন ইমনের পরিবর্তে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেছিলেন তিনি। সেদিন করেছিলেন ৩০ রান। তবে উদ্বোধনী জুটিতে করেন ৬৩ রান। এবার দ্বিতীয় সুযোগেই করে ফেললেন হাফ সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয়, ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে সাইফ আউট হন ৬১ রান করে। ৪৫ বলে খেলা এ ইনিংসটি সাজানো ছিল ২টি চার ও ৪টি ছক্কায়। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি।

১৬৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই তানজিদ হাসান তামিমের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কোনো রান না করেই আউট হয়ে যান তিনি। এরপর সাইফ হাসান এবং লিটন দাসের ৫৯ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ২৩ রান করে আউট হন লিটন দাস। এরপর ৫৪ রানের জুটি গড়েন তাওহিদ হৃদয় ও সাইফ হাসান।

৪৫ বলে ৬১ রান করে আউট হন সাইফ হাসান। তাওহিদ হৃদয় ৩৭ বলে ৫৮ রান করে আউট হন। ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ১২ বলে, জাকের আলী অনিক আউট হন ৯ রান করে। শেখ মেহেদী শূন্য রানে আউট হয়ে যান। নাসুম আহমেদ মাঠে নেমে করেন জয়সূচক রান। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও দাসুন শানাকা নেন ২টি করে উইকটে।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা সংগ্রহ করে ৭৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান। ৩৭ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকেন দাসুন শানাকা। ৩৪ রান করেন কুশল মেন্ডিস, ২২ রান করেন পাথুম নিশাঙ্কা ও ২১ রান করেন চারিথ আশালঙ্কা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ১৬৮/৭, ২০ ওভার (দাসুন শানাকা ৬৪*, কুশল মেন্ডিস ৩৪, পাথুম নিশাঙ্কা ২২, চারিথ আশালঙ্কা ২১; মোস্তাফিজুর রহমান ৩/২০, মেহেদী হাসান ২/২৫, তাসকিন ১/৩৭)।

বাংলাদেশ: ১৬৯/৬, ১৯.৫ ওভার (সাইফ হাসান ৬১, তাওহিদ হৃদয় ৫৮, লিটন দাস ২৩, শামীম হোসেন পাটোয়ারী ১৪*, জাকের আলি অনিক ৯; দাসুন শানাকা ২/২১, হাসারাঙ্গা ২/২২)।

ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: সাইফ হাসান (বাংলাদেশ।

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন

Scroll to Top