উজ্জ্বল দত্ত : নগরীর বিমানবন্দর সড়কের সল্টগোলা থেকে ইপিজেড-বন্দরটিলা-সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত প্রায় চার/পাঁচ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। রাস্তাটির এ অংশে কিছু দূর পর পরই সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। পলেস্তার উঠে গেছে অনেক আগেই। সম্প্রতি বৃষ্টিতে ওই গর্তগুলোতে পানি জমে অবস্থা হয়েছে আরও ভয়াবহ!পানি আর কাদায় একাকার পুরো রাস্তা। দেখলে মনে হবে রাস্তা তো নয় যেন জল-কাদার জমি।
ভূক্তভোগীরা জানান, চরম ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে ছোটবড় বিভিন্ন যানবাহন। অসহনীয় ভোগান্তিতে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে লাখো জনসাধারণকে। সড়ক সংস্কারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামক দুটি সংস্থা থাকলেও নগরীর প্রধান এ সড়কটি যেন কারো দৃষ্টিতে নেই!
বেহাল অবস্থার কারণ
সরেজমিন দেখা গেছে, সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত এ সড়কের পাশে কোন নালা নেই। আগে রাস্তার পাশে সরু নালা থাকলেও ওয়াসার পাইপ লাইন পড়ে নালাটি নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত পানি নালায় পড়তে পারছে না। সমস্ত পানি রাস্তায় এসে পড়ছে। আবার প্রতিদিনই এ সড়কে জোয়ারের পানি উঠে। তারওপর বৃষ্টি যদি হয় এ সড়কের অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে ওঠে।
রাস্তার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে উদ্যোগ
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, সিডিএ’র পক্ষ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আওতায় ২০২২ সালে কাঠগড় থেকে সী বীচ পর্যন্ত নালা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে নানা কারণে সে কাজ এখনো শুরু হয়নি। রাস্তা সংশ্লিষ্ট খালের পাড় ঘেঁসে এ নালা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সিডিএ’র।
এদিকে কেইপিজেড এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার র্যাম্প নির্মাণ কাজটি শুরু হলেও নগরবাসীর প্রতিবাদের মুখে বন্ধ হয়ে যায়। তবে র্যাব অফিসের সামনে থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার র্যাম্প নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আর এতে করে সংশ্লিষ্ট সড়কে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, প্রায় ২০ বছরের অধিক সময় ধরে এখানে কোন ড্রেন নেই। বিগত সময়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের কারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে। এতে করে প্রায় ৬/৭ বছর রাস্তার কাজ করা হয়নি। এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে তারপর র্যাম্প নির্মাণের কাজের জন্য আবার খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। কয়েকটি পিলার নির্মাণের পর বর্তমানে তা আবার বন্ধ হয়ে গেছে। একের পর এক খোঁড়াখঁড়ির কারণে একদিকে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত, তারওপর রাস্তায় জোয়ারের পানি, নালার পানি। এমন অবস্থায় চলছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মুভারের মত ভারী যানবাহনসহ শত শত গাড়ি।
কাঠগড় এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী ধীমান ঘোষ বলেন, কর্মসূত্রে আমাকে প্রতিদিন ষোলশহরে আসতে হয়। এ সড়কের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। কিছুদূর পরপরই বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে অনেক সতর্কভাবে বাইক চালাতে হয়। কখন যে গাড়ি গর্তে পড়ে যাচ্ছে, কখন যে দুর্ঘটনা ঘটছে এ দুশ্চিন্তা নিয়েই যাতায়াত করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এ সড়কের গর্তে পড়ে বাস, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান আটকে যায়। আটকে যাওয়া গাড়ি তুলতে তুলতে গিয়ে সড়কে সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। শুধু যানবাহন নয়, এ সড়ক দিয়ে পায়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়েছে। পুরো সড়ক জুড়ে কাদা। পায়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়েছে।
সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাটি করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে তো আর রাস্তার কাজ করা যাচ্ছে না। সিডিএ কাঠগড় থেকে সী বীচ পর্যন্ত খালের পাড় ধরে নালা নির্মাণের কাজ শুরু করবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ কাজ শুরু হবে। ড্রেন করা না গেলে রাস্তার পানি সরানো যাবে না। ড্রেন নির্মাণ না করা পর্যন্ত রাস্তাটির এই বেহাল অবস্থা দূর হবে না।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ