চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : জীবিত হোক বা মৃত, কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। প্রথমে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে এবং পরে জীবিত ধরতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে; এমন ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড বেঁধে যায়।
রবিবার (২৩ জুন) দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট লিখে সেটি পাবলিক করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি সভার বিবিধ আলোচনায় শামীম হক ফরিদপুরে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। এসময় সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ এই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, শুধুমাত্র কোতোয়ালি থানার মধ্যে কেউ এই সাপ মারতে পারলে তাকে এই টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। আমাদের সভাপতি সাহেব এই টাকা দিবেন।
এ ঘোষণার পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। পুরস্কার পেতে বিভিন্ন জায়গায় সাপ মারার উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গম চরের ৩৮ দাগ এলাকায় গত শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে জমিতে ঘাস কাটার সময় একটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেটি লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে মেরে ফেলেন ওই গ্রামের মুরাদ মোল্লা (৪৩) নামে একজন কৃষক। এরপর তিনি সাপটি পদ্মা পাড়ি দিয়ে সিএন্ডবি ঘাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকিরের অফিসে নিয়ে আসেন। আবু ফকির তখন সাংবাদিকদের জানান, মুরাদ মোল্লাকে সভাপতি ঘোষিত পুরস্কার দেয়া হবে।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের এই পুরস্কারের ঘোষণার পরে বনবিভাগের পক্ষ থেকে এটি আইনসিদ্ধ নয় বলে সমালোচনা করা হয়।
এরপর অবশ্য রাসেলস ভাইপার সাপ মেরে ফেললে পুরস্কার দেয়ার পূর্ব ঘোষণা থেকে সরে এসে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়- মেরে ফেললে নয়, জীবিত অবস্থায় রাসেলস ভাইপার ধরতে পারলে পুরস্কার দেয়া হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ পিয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন কেউ যদি নিজেকে রক্ষাকারী পোশাক সম্বলিত হয়ে এবং সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক জনস্বার্থে রাসেলস ভাইপার সাপটি জীবিতাবস্থায় ধরতে পারেন-তবে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কৃত করা হবে। এরপর আবার জীবিত সাপ ধরার উৎসাহ সৃষ্টি হয়।
গত ২২ জুন সকালে পদ্মার চর থেকে একটি জীবিত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরেন রেজাউল নামে এক কৃষক। শনিবার সন্ধ্যায় পাতিলের মধ্যে একটি জীবিত সাপ নিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে হাজির হন সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কাদেরের বাজার এলাকার জনৈক রেজাউল নামে ওই ব্যক্তি। রেজাউল বলেন, সকালে চরের মধ্যে থেকে ধরছি। সাপটা হাইট্যা যাইতেছিল। গায়ের গেঞ্জি ছুঁড়ে ওকে ধরছি। রেজাউল বলেন, নেতারা পুরস্কার ঘোষণা করছেন। এজন্য রিস্ক নিয়ে ধরছি। এখন বনবিভাগে জমা দিতে আইছি। তবে রোববার দুপুরে ফরিদপুরের বনবিভাগের অফিসে সাপটি নিয়ে গেলে তাকে সাপ সহ ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করাটাইতো অবৈধ। মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। আমরা এটা প্রমাণ করতে যাবো কেন? ওই কৃষকের উচিৎ হবে যেখান থেকে সাপটি ধরেছে ওই স্থানে ছেড়ে দেওয়া।
এদিকে আজ দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে সকলকে রাসেল ভাইপার সাপ মারা বা ধরার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস