রাশিয়া-ইউক্রেন বাদ— দাম বেশি হলেও সরকার গম কিনবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে!

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: গম আমদানিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ছিল ইউক্রেনের ওপর। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ভারত হয়ে যে গম বাংলাদেশে আসতো সেগুলো ছিল রাশিয়ার। যদিও ইউক্রেনের দাবি ছিল— রাশিয়া দক্ষিণ এশিয়ায় যে গম রপ্তানি করছে তার সিংহভাগ ইউক্রেন থেকে লুট করা। তবে এবার রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে সরে এসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গমের মূল্য সবচেয়ে বেশি।

জানা গেছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জি-টু-জি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে দুই লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম কিনবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা।

আজ বুধবার (২৩ জুলাই) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ গম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে জি-টু-জি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই গম কেনার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর ৬৮(১) ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) মোতাবেক জি টু জি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।

এ অনুমোদনের পর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেয়।

এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের হুইট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা ব্যয়ে দুই লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম পড়বে ৩০২ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম কেনার পেছনে যুক্তি তুলে ধরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৩০ জুন বাণিজ্য সচিবের পক্ষ থেকে খাদ্য সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বিদ্যমান ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে আমদানির ওপর আরও ৩৭ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধিক পণ্য আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এদিকে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একটু ডাইভার্সিফাই করতে চাচ্ছি। অনেক সময় রাশিয়ান ব্লক কিংবা ইউক্রেন ব্লকে একটা অনিশ্চয়তা দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন আমাদের আমদানি বাড়ানোর নেগোশিয়েশন চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান ভালো।

যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম তুলনামূলক বেশি কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন— দাম একটু বেশি হলেও, আমরা অন্যদিকে দিয়ে সুবিধা পাবো। যুক্তরাষ্ট্রের গমের প্রোটিনও কিছুটা বেশি। প্রোটিন খুব বেশি তা নয়, তবে একটু বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক প্রয়োগের আর মাত্র আটদিন বাকি। এর মধ্যে দর কষাকষির আলোচনার জন্য বাংলাদেশর প্রস্তুতি কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী ১ আগস্টের আগেই বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।

অন্য প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করছি শুল্ক হয়তো কিছুটা কমাবে। কারণ, আমাদের ঘাটতি তো খুবই কম। ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে লবিস্ট নিয়োগের দাবি জানানো হচ্ছে, একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন— এক্ষেত্রে লবিস্ট নিয়োগের প্রসঙ্গ নেই। কারণ, লম্বা সময় নিয়ে কোনো নেগোশিয়েশনের ক্ষেত্রে এ ধরনের লবিস্ট নিয়োগ করা হয়। এখানে যা করতে হবে কুইক করতে হবে। ওরা তো ঢুকতেই পারবে না, ওই অফিসের কাছাকাছি। নেগোশিয়েশন তো দূরের কথা।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ভালো ইমেজ আছে। সম্প্রতি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন, এক্সিলারেট এনার্জি, মেটলাইফের কতগুলো বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে ইউএস চেম্বার আমাকে চিঠি লিখেছে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top