আলমগীর মানিক,রাঙামাটি: রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান পিএইচডি, এমপিল ও এমএস। বৃহস্পতিবার (৯ই জানুয়ারী) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব এ.এস.এম কাসেম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১ এর ১০(১) ধারা অনুসারে মো: আতিয়ার রহমান, পিএইচডি, ডিন, ফ্যাকাল্টি অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্স এবং প্রফেসর ডিপার্টমেন্ট অব বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে উক্ত রাবিপ্রবি’র ভাইস-চ্যান্সেলর পদে তার যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হলো।
এদিকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অধ্যাপক ড. মো.আতিয়ার রহমান।
এদিকে, রাঙামাটি রাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন জানায়, বিগত ৫ মাস ধরে আমাদের প্রিয় শিক্ষাঙ্গন অভিভাবকহীন ছিলো। সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতার পাশাপাশি চরমভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। অবশেষে আমাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে মাননীয় ভিসি হিসেবে ড. মো. আতিয়ার রহমান স্যারকে নিয়োগ প্রদান করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ছাত্রনেতা জসিম জানায়, ধারাবাহিক আন্দোলনের পাশাপাশি ২৪ সালের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে রাঙামাটির জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।সম্প্রতি আমরা চলতি মাসের ৬ই জানুয়ারী তারিখে রাঙামাটিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে রাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। এসময় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রুহুল আমিন ও বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু দাদা আমাদেরকে বুধবারের মধ্যে ভিসি নিয়োগের ব্যাপারে আশ্বস্থ করেছিলেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার ৯ই জানুয়ারী আমাদের বহুল কাঙ্খিত ভিসি নিয়োগ সম্পন্ন করায় আমরা সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়োগ পাওয়া ভিসি ড.মো.আতিয়ার রহমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্স এর একমাত্র ফেলো। যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে ১৯৯০ সালে এসএসসি, ১৯৯২ সালে এইচএসসি, ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞানে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যাপক রহমান ২০০৬ সালে জাপানের এহিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনাইটেড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সস থেকে জৈব রসায়ন ও খাদ্য বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকান সরকারের এনআরএফ ফেলো হিসেবে ডারবানের কোয়াজুলু নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের পোস্ট ডক্টরাল গবেষণাও সম্পন্ন করেন।
অধ্যাপক রহমান বর্তমানে বিকল্প চিকিৎসা ও প্রাকৃতিক পণ্য গবেষণার ল্যাবরেটরির প্রধান তদন্তকারী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তিনি থাইল্যান্ডের ওয়ালাইলাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক অধ্যাপক (বিশিষ্ট স্কলার ক্যাটাগরি) হিসেবে এক বছরের চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বাংলাদেশ; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি); এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও প্রকাশনা সেল, প্ল্যাট এবং উদ্ভিদ-ভিত্তিক পণ্যের থেরাপিউটিক সম্ভাবনার উপর। উদ্ভিদপণ্য ব্যবহার করে জৈব ন্যানো পার্টিকেলের সংশ্লেষণ এবং ডক্সোরুবিসিন-প্ররোচিত কার্ডিওটক্সিসিটিতে তাদের থেরাপিউটিক সম্ভাবনার মূল্যায়ন তার সবচেয়ে সফল গবেষণা প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি। জিন এক্সপ্রেশনের মডুলেশনের মাধ্যমে অ-সংক্রামক থেরাপিউটিক ব্যবস্থাপনায় উদ্ভিদ উপকরণের প্রভাবও ওষুধ আবিষ্কার প্রক্রিয়ায় তার উল্লেখযোগ্য অবদান।
আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে পিয়ার রিভিউ করা ১৪৯ টিরও বেশি প্রকাশনা রয়েছে, যা এলসেভিয়ার, উইলি, স্প্রিংগার এবং এমডিপিআই-এর মতো প্রকাশকদের কিউওয়ান সূচীবদ্ধ বৈজ্ঞানিক জার্নালে উচ্চমানের। তিনি ১০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের আলোচনা প্রদান করেছেন। অধ্যাপক রহমান বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের দ্বারা সম্পাদিত বিখ্যাত প্রকাশকদের পাঁচটি বইয়ের অধ্যায় প্রকাশ করেছেন।
অধ্যাপক আতিয়ার বিকল্প চিকিৎসা, কার্যকরী খাদ্য এবং আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বিএমসি পরিপূরক চিকিৎসা ও থেরাপি (সম্পাদক) নামে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নালের সম্পাদক এবং সম্পাদকীয় বোর্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অ্যানালিটিক্যাল সেলুলার অ্যান্ড প্যাথলজি (সম্পাদক), ওবিএম জেনেটিক্স (সম্পাদক), ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ নিউট্রিশন (সম্পাদক) এবং আরও কিছু জার্নালের বেশ কয়েকটি বিশেষ সংখ্যার অতিথি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক অবদানের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন স্বর্ণপদক ২০১৯ দ্বারা মনোনীত হয়েছেন। তিনি বিএএস-এএএসএসএ” তরুণ বিজ্ঞানী পুরস্কার, জৈব নিরাপত্তা পুরস্কার ২০১৭, মালয়েশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্স এবং মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও মেডিসিন একাডেমি কর্তৃক যৌথ ভ্রমণ পুরস্কার ২০১৭, পিএইচডি প্রচেষ্টার জন্য জাপান সরকার কর্তৃক ২০০৩ সালে এমইএক্সটি বৃত্তি, দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানের কোয়াজুলু নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকান সরকারের কর্তৃক এনআরএফ ফেলোশিপ ২০১১ পেয়েছেন।
অধ্যাপক রহমান বাংলাদেশ সোসাইটি ফর বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির (বিএসএমবি)যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ বায়োসেফটি অ্যান্ড বায়োসিকিউরিটি সোসাইটির (বিবিবিএস) কোষাধ্যক্ষ, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অফ বাংলাদেশী বায়োটেকনোলজিস্টস (জিএনওবিবি) এর নির্বাহী কমিটির সদস্য, ফেডারেশন অফ এশিয়ান বায়োটেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশনস (এফএবিএবিএ) এর একাডেমিক সদস্য এবং এশিয়ান ফেডারেশন অফ বায়োটেকনোলজি (এএফওবি) এর বোর্ড সদস্য, এশিয়ান সোসাইটি অফ ফার্মাকগনোসি (এএসপি) এর বোর্ড পরিচালক, ফাইটোকেমিক্যাল সোসাইটি অফ এশিয়া (পিএসএ) এর আজীবন সদস্য এবং এশিয়া প্যাসিফিক কনসোর্টিয়াম অফ রিসার্চার্স অ্যান্ড এডুকেটরস (এপিসিওআরই )এর আজীবন সদস্য হিসেবে কমর্রত। তিনি ইনস্টিটিউট অফ ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইএফটি) এরও সদস্য। তিনি ন্যাশনাল ইয়ং একাডেমি অফ বাংলাদেশ (এনওয়াইএবি) এর সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানা গেছে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি

 
															
 
								




