নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের দেখভালের দায়িত্বে যেন কেউই নেই! সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি, রাতে জ্বলেনা সড়কবাতি। তবে দিনের আলোয় কয়েকটি স্থানে টানা জ্বলতে থাকা সড়কবাতি নেভানোর দায়িত্বও পালন করেনা কেউই।
এতে একদিকে যেমন বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। আবার অন্যদিকে রাতে বাতি না জ্বলার কারণে সৃষ্ট আলোক স্বল্পতায় ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনার শংকা।
সরেজমিনে দেখা যায়— নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশে লালখান বাজার থেকে জিইসি, দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুৃর পর্যন্ত অনেকগুলো বৈদ্যুতিক খুঁটিতে সারাদিন ধরে বাতি জ্বলছে। ফ্লাইওভারের পূর্বপাশে মুরাদপুর থেকে দুই নম্বর গেইট পর্যন্ত এলাকার বাতিগুলো রাতেও জ্বলেনা।
ফ্লাইওভারটিতে চলাচল করা মোটরসাইকেল আরোহী জাহিদ হাসান চাটগাঁ নিউজকে বলেন, ঝুঁকি নিয়ে আমাদের বাইক রাইড করতে হয়। কিছু স্থানে সড়কবাতি থাকলেও সেগুলোর রয়েছে আলোকস্বল্পতা। তাছাড়া পুরো ফ্লাইওভারটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। রাস্তার পাশে নষ্ট গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেও সেগুলো চোখে দেখতে কষ্ট হয়। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার শংকা।
সিএনজি অটোরিকশা চালক হুমায়ুন কবির বলেন, ফ্লাইওভারটিতে অনেকগুলো বাতি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। এতে করে ফ্লাইওভারে রাতের বেলা আলোকস্বল্পতা সৃষ্টি হয়। স্পিড ব্রেকারগুলো ঠিকভাবে চোখে পড়ে না। দুর্ঘটনার শংকা নিয়ে আমাদের গাড়ি চালাতে হয়।
চসিক সূ্ত্রে জানা গেছে, ফ্লাইওভারটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। তবে ফ্লাইওভারের বাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ট্রেড ম্যাক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ফ্লাইওভারটির সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে ২০২০ সালে চসিকের সাথে চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেড ম্যাক্স বাতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটি পেয়েছিল। চুক্তি অনুসারে সড়ক বাতির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করত প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সাথে চুক্তি নিয়ে আইনগত জটিলতা তৈরী হয়। এর ফলে ট্রেড ম্যাক্স বাতির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগ দায়িত্ব নিয়ে ফ্লাইওভারের বাতি নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে দিনের বেলায় বাতি জ্বলায় একদিকে যেমন বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে বিদ্যুৎ বিল। এতে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে ফ্লাইওভারের আশেপাশে থাকা বাসিন্দাদের।
তাদেরই একজন মো. বখতেয়ার উদ্দিন। তিনি চাটগাঁ নিউজকে বলেন, দুপুর ১২ টায়ও দেখি ফ্লাইওভারের এক পাশের লাইট জ্বলছে। কিন্তু যে সময়ে লাইটগুলো জ্বলার কথা সেসময় জ্বলেনা। কারণ অনেকগুলো বাতি নষ্ট। দিনের বেলায় বাতি জ্বলার কারণে বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। এসব বিষয় দেখার যেন কেউ নেই। এই বিলতো আমাদের ট্যাক্সের টাকায় দিবে তারা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাফকাত বিন আমীন বলেন, দিনের বেলা বাতি জ্বলার ব্যাপারে কোন অভিযোগ তো আমাদের কাছে আসেনি। তবে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এটি হতে পারে। আগামীকালের মধ্যে এটি সমাধান করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত চার লেনের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। ২০১৫ সালের মার্চে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফ্লাইওভারটির মূল অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারসহ চারটি ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/জেএইচ