রাতের আঁধারে নগরে ঢুকছে চোরাই পণ্য, অধরা যুবলীগ নেতা আজম!

হাসান সৈকত : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলেও চট্টগ্রাম নগরীতে যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম আজমের চোরাচালান বাণিজ্য থেমে নেই। রাত গভীর হলেই নগরে প্রবেশ করতে থাকে একের পর এক ট্রাকভর্তি চোরাই পণ্য। নগরীর কোতোয়ালীসহ বিভিন্ন থানার একাধিক চোরাচালান মামলার পরও দমানো যাচ্ছে না চোরাকারবারি আজমকে।

অভিযোগ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আজমের এই চোরাচালান কার্যক্রম সংঘটিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে সরকার পতনের পর যেন তার অবৈধ বাণিজ্য চলছে আরও পূর্ণ শক্তিতে। প্রশাসন ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে ঘনিষ্টতা তৈরি করে বরাবরই যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে রেজাউল করিম আজম।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রেজাউল করিম আজম (৫৫) নগরীর ২২ নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সেক্রেটারি। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারি বলে পরিচিত। হাটহাজারী থানার এনায়েতপুর এলাকার উকিল বশর চৌধুরী বাড়ির মৃত আবুল বশর চৌধুরীর ছেলে।

এদিকে, প্রতিবেদকের তদন্তে জানা যায়, ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এই চোরাচালান সিন্ডিকেট বাণিজ্য ‍শুরু করেন রেজাউল করিম আজম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন থানায় চাঁদা দিয়ে প্রায় প্রতি রাতেই অবৈধ পণ্য নগরীতে নিয়ে আসেন। এরপর এসব চোরাই পণ্য সাপ্লাই দেন নগরীর টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলেও এখনো আজমের নেতৃত্বে অবৈধ চোরাই পণ্যে রমরমা ব্যবসা চলছেই।

জানা গেছে, রেজাউল করিম আজমের অবৈধ পণ্যের তালিকা বেশ লম্বা। যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। তার চোরাচালানের মধ্যে রয়েছে- চিনি, বিদেশি সিগারেট, শাড়ি, কসমেটিকস, বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশি মাদকদ্রব্যসহ নানা ধরনের চোরাই পণ্য। যা দেশের বৈধ ব্যবসা ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চোরাচালান রোধে প্রায় সময় অভিযান চালালেও বরাবরই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে রেজাউল করিম আজম।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে রিয়াজউদ্দিন বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, আজমের নেতৃত্বে চোরাচালান সিন্ডিকেট রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেরও ব্যাপক ক্ষতি করছে। সরকার এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ না নিলে এই চোরাচালান সিন্ডিকেট অবৈধ ব্যবসা আরও ব্যাপকতা পাবে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন থানায় চোরাচালানের একাধিক মামলা রয়েছে আজমের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালে আজমের প্রায় ২১ লাখ টাকার নিষিদ্ধ বিদেশি ব্রান্ডের সিগারেটের চালান আটক করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নগরীর পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মনিরুল ইসলাম খোরশেদ।

পরিচয় গোপন করে চোরাচালানের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আজম বলেন, আগে ব‍্যবসা বেশ জমজমাট ছিলো। বর্তমানে কিছুটা মন্দা। এসময় তিনি অভিযোগের সুরে আরও জানান, কিছুদিন আগে সীমান্ত পার করে অবৈধ পণ্য আনার সময় চট্টগ্রামের বারৈয়ার হাট এলাকায় তার চোরাচালানের মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল করিম চাটগাঁ নিউজকে বলেন, আমরা চোরাচালানের বিষয়ে যথেষ্ট সোচ্চার। কাউকে কোন রকমের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। গত মাসেও দুটি বড় চালান আটক করেছি।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top