রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাণীরহাট বাজারে কৌশলে ডেকে নিয়ে মো. মামুন মাঝি (৩৮) নামে কাউখালীর এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। এরপর পরিবার থেকে দুটি চেক নেয়ার পরও ফোনে আরও দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি।
এই ঘটনায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। তবে ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও আজ সোমবার (১৪ জুলাই) পর্যন্ত এখনো উদ্ধার হননি ব্যবসায়ী মামুন মাঝি। এই ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজ মামুন রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের সুগারমিল আদর্শগ্রাম এলাকার মো. আলী আহম্মদের ছেলে।
তার স্ত্রী সীমা আক্তার জানান, মামুন গত ৭ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে ঘর থেকে বের হন। এরপর সন্ধ্যার দিকে তাকে ফোন দিলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে একইদিন রাত ৯টার দিকে মামুন তার স্ত্রীকে ফোন করে দুটি চেক রাণীরহাট বাজারে পাঠাতে বলে এবং তিনি সকালে ফিরবেন বলে জানান। একটিতে স্ত্রীকে স্বাক্ষর করে দেয়ার জন্যেও বলেন। পরে মামুনের পিতা আলী আহম্মদ চেক দুটি নিয়ে রাণীরহাট বাজারে গেলে মুখে মাস্ক দেয়া একজন যুবক এসে এগুলো নিয়ে যান।
চেক দেয়ার আগে ছেলেকে ফোনে জানতে চাইলে— কোন ঝামেলা ছাড়া দিয়ে দিতে বলে মামুন এবং বাবাকে বলেন, তাকে যেনো মাফ করে দেন। এরপর থেকে মামুনের আর কোন খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে পরদিন ৮ জুলাই সকালেও মামুন না ফিরলে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় কাউখালী থানায় পরেরদিন বিকালে নিখোঁজ ডায়রি করেন স্ত্রী সীমা আক্তার।
এরপর তার স্বামী মামুনের মোবাইল থেকে ফোন করে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। বিষয়টি থানায় জানালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাণীরহাট থেকে চেক নিয়ে যাওয়া ঠান্ডাছড়ি এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারকে গ্রেফতার করে।
পরে পুলিশকে সে জানায়— মামুনের একই গ্রামের বাসিন্দা কামরুল (২৮) নামে এক ব্যক্তি এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কামরুল রাণীরহাট বাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সেখানে নিয়ে গিয়েই তাকে চায়ের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে, কামরুল নামের অভিযুক্ত ছেলেটি অপহৃত মামুনের পরিবারের কাছে ৭টি ফোন রেকর্ডের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং বলেন তাকেও একরকম বাধ্য করে ৫জন ব্যক্তি তার মাধ্যমে মামুনকে ডেকে নিয়ে গেছেন এবং তার বাসা থেকে তাদের হাতে মামুনকে হস্তান্তর করেছেন বলে তিনি জানান।
স্ত্রী সীমা আক্তারের অভিযোগ— দীর্ঘ ৭ দিন হলেও পুলিশ তার স্বামীকে উদ্ধার করতে পারেনি। তাদের ভূমিকা রহস্যজনক। এই সময়ে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন এলেও একবারের জন্যেও স্বামীর কন্ঠ শুনেননি তিনি। ছোট ছোট তিন বাচ্চা এবং বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে প্রতিনিয়ত হতাশায় দিন কাটছে তার। এমনকি অপহরণের সাথে জড়িত আনোয়ার এবং কামরুলের পিতা ও স্ত্রীকে স্থানীয়রা ধরে থানায় দিলেও এখনো পুলিশ অপহরণের কোন কূল কিনারা করতে পারেনি। এখন তার স্বামী জীবিত আছে কিনা সেই শঙ্কায় দিন কাটছে বলে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান স্ত্রী সীমা।
জানতে চাইলে কাউখালী থানার উপপরিদর্শক মো. ইসমাঈল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, স্ত্রীর নিখোঁজ ডায়েরীর ভিত্তিতে মামুনকে উদ্ধারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে কি মামলায় আদালতে দেয়া হয়েছে এবং অপহরণ মামলা নেয়া হয়নি কেনো জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি ওসি দেখবেন এবং সাক্ষাতে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
চাটগাঁ নিউজ/জগলুল/এমকেএন