জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া: রাঙ্গুনিয়ায় প্রতি বছর বছর বাড়ছে আউশের আবাদ। এবছর আউশের নমুনা শস্য কাটার পর দেখা গেছে গড়ে ২ দশমিক ৬ মেট্টিক টন হারে ফলন এসেছে। তবে ফলন আরও বেশি আসলেও পাখির দল তা খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছে। ফলে পাখির উপদ্রবে আউশ আবাদে আগ্রহ হারাতে বসেছেন অনেক কৃষক। যদিও বোরো ও আমনের মাঝে তৃতীয় ফসল হিসেবে আউশ ধান আবাদে কৃষকরা এক জমি থেকে বছরে তিনবার ফসল উঠাতে পারছেন। তবে একযোগে সকল কৃষক আউশ আবাদ করলে পাখির উপদ্রব কমে আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের কৃষক আবদুস সালাম। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এবার এক কানি জমিতে আউশ আবাদ করেছেন। ফলন বেশ ভালোই এসেছিলো। কিন্তু কাটার আগেই পাখির উপদ্রব বেড়ে যায়। কোন উপায় না পেয়ে পাখি তাড়াতে তিনি নেট ব্যবহারের পাশাপাশি একজন পাহাড়াদার নিয়োগ দেন। যিনি সার্বক্ষণিক একটি বিশেষ কায়দায় বাঁধা ঘন্টা বাজানোর মাধ্যমে কৃষি মাঠ থেকে পাখি তাড়ানোর কাজ করেছেন। এতে তিনি গড়ে ৩ দশমিক ৬৩ মেট্টিক টন ধান পেয়েছেন। পাখির উপদ্রব না হলে তা পাঁচ টন ছাড়িয়ে যেতো বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর, পোমরা ও লালানগরে গেলে কথা হয় কৃষকদের সাথে। তারা জানান, এবার আউশে ভালো ফলন এলেও তা কেটে ঘরে তুলার আগেই সাবাড় করে দিচ্ছে পাখির ঝাঁক। এতে ফলন যেখানে হেক্টর প্রতি ৫-৬ টন পাওয়ার কথা, সেখানে উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ২ দশমিক ৩৭ টন, পোমরায় ৩ দশমিক ৩১ মেট্টিক এবং লালানগরে ৩ দশমিক ০৫ টন ফলন পেয়েছে কৃষক। একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতেও। ফলে আউশ আবাদে বাড়তি একটা ফলন কৃষক পেলেও পাখির কারণে তা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসের দিকে রাঙ্গুনিয়ার ৩০০ জন কৃষককে পাঁচ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫টি প্রদর্শনী এবং ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প থেকে আরও চারটি প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। যেখানে প্রতিজন কৃষককে ৪০-৪৫ কেজি হারে সার, ১০ কেজি বীজ ও সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, অনেক আগে থেকেই রাঙ্গুনিয়ায় আউশের আবাদ চলে এলেও মাঝখানে তা অনেকটা কমে আসে। গেল ৪-৫ বছর ধরে আবারও পুরোদমে আউশের আবাদ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে উপজেলার ৮২ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের শুরুতে বৃষ্টি কম হওয়ায় উপজেলার ৭০ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিলো। তবে এবার ৭৩ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আউশ শব্দের অর্থ আগাম। বাংলা আশু শব্দ থেকে আউশ শব্দের উৎপত্তি। ১০০ থেকে ১২০ দিনের ভেতর এ ধান ঘরে তোলা যায়। দ্রুত ফসল উৎপন্ন হওয়ার বিচারে এই ধানের এমন নামকরণ হয়েছে। আউশে আমন–বোরোর মতো যত্ন নিলে বাম্পার ফলন হয়। প্রণোদনা হিসেবে এবার দেয়া ব্রি–ধান–৯৮ এর জীবনকাল ১১২ দিন। আউশে ভালো ফলন এসেছে।’
পাখির উপদ্রব বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই আউশ ধান আবাদ হওয়ায় ফলন আসার পর পাখির উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে নেট দিয়ে রক্ষাসহ কৃষকদের এর হাত থেকে রক্ষায় নানা পরামর্শ সহায়তা করা হয়। তবে দিন দিন এই ধানের আবাদ বাড়ায় ভবিষ্যতে এই সমস্যা আর থাকবে না।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ