জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়ন। যে ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কর্ণফুলী নদীর তীরজুড়ে এক সময় ছিল তপ্ত বালুচর। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্টে গেছে দৃশ্য। সেই বালুচরে এখন খেলা করছে সোনালী ধানের ঢেউ। তবে এ পরিবর্তন রাতারাতি নয়, বরং কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অল্প অল্প করে আবাদ করে পাল্টিয়েছে বালুচরের দৃশ্য।
উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় এই বালুচরে আবাদ হয়েছে আউশ ধান। কৃষকের কষ্টের সেই আউশ ধান এখন পেকে সোনালী রঙ ধারণ করেছে। এখন ধান কাটার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে কৃষকেরা। তার আগেই বাতাসে দোল খাওয়া সোনালী ধানের ঢেউ মুগ্ধ করছে স্থানীয়দের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধূ ধূ বালুচর এখন সোনালী ধানের দখলে। তীব্র রোদের মাঝে হালকা বাতাসে সোনালী রঙের ধান গাছের ঢেউ খেলানো চিত্র মুগ্ধ করছে সবাইকে। যেখানে কেউ কেউ যাচ্ছে অবসন্ন বিকেলে সময় কাটাতে। আবার পাখির কলকাকলীতে আগত দর্শনার্থীদের মন উৎফুল্ল হলেও চিন্তার ভাঁজ যেন কৃষকের কপালে। কারণ কষ্টের ফসল ঘরে তোলার আগেই যে সাবাড় করে দিচ্ছে ময়না, টিয়া, ফিঙ্গে, চড়ুই আর হরেক রকম কবুতর।
মো. রিয়াজ নামে ঘুরতে আসা এক ব্যক্তি জানান, বালির মধ্যেও যে ধান আবাদ করা যায়, তা এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না। ধান আবাদের ফলে নদীপাড়ে চরের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তেমনি সৌন্দর্যপিপাসুদের আনাগোনাও বেড়েছে।
জানা গেছে, পরীক্ষামূলকভাবে এবার প্রায় দেড়শ কানি জমিতে উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে ২৫ জন কৃষকের মাধ্যমে আউশের আবাদ করা হয়েছিল। যা এখন ঘরে তোলার উপযুক্ত হয়েছে। এবার হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় তিন টন পর্যন্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কথা হয় স্থানীয় কৃষক আবদুল মালেকের সাথে। তিনি জানান, চরে এবার তিনি ৬ কানি জমিতে আউশ আবাদ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। এভাবে ফলন আসবে তিনি কল্পনা করেননি।
আবদুল মালেক আরও জানান, এক কানিতে (৪০ শতকে) তার খরচ হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। যেখানে গুমাইবিলে খরচ হয় এর ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি। প্রতি কানিতে ৬০০-৭০০ কেজি মতো ধান হবে। কানি প্রতি ৬০০ কেজি করে ফলন হলেও কেজি ৩০ টাকা হিসেবে ১৮ হাজার টাকার ধান হবে। আরও কমের মধ্যে হলেও কানিতে অন্তত ১৫ হাজার টাকার ধান হবে। মানে ১২০ দিনে ফলন আসার পর বিনিয়োগের তিনগুণ লাভ হচ্ছে। এতে অন্যান্য কৃষকরাও আউশ আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, চরটি খালি পড়েছিল এতদিন। তাই কৃষকদের এই চরে চাষ করার জন্য আগ্রহী করে তুলি। তাদেরকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করি। ৩-৪’শ কানি আয়তনের পুরোটা আবাদের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। যদিও পাখির উপদ্রব একটু বেশি । তবে তা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, চরে বীজ বপণ করার সময় রোদের তীব্রতা ছিল বেশি, পানির সমস্যাও ছিল। এজন্য স্বাভাবিকের চেয়ে ফলন পেতে ১০-১৫ দিন সময় বেশি লেগেছে। অন্যান্য চরে যেখানে বালি তুলে আগ্রাসন চালায়, সেখানে এই স্থানে চাষাবাদের ফলে সেই সুযোগ পায়নি বালুখেকোরা। বরং আবাদযোগ্য মোট জমির পরিমাণ বেড়েছে। ভবিষ্যতে এই চরের পুরোটাও আবাদযোগ্য হবে।
উল্লেখ্য, উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়ন দিয়ে পাড়ভাঙন রোধে মাঝনদী থেকে বালি এনে কূলে ফেললে এই বালিচরের সৃষ্টি হয়। এবার এই চরে আবাদের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ২৫ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে আউশ ধান বীজ ও সার দেওয়া হয়েছিল। কৃষকরা সেখানে এসব বীজ ফলিয়ে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছেন। যেখানে এর আগে তারা সবজিও চাষ করেছিল বলে জানা গেছে।
চাটগাঁ নিউজ/জগলুল/জেএইচ/এসএ