রাউজান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক বছর ধরে নেই জলাতঙ্কের টিকা

রাউজান প্রতিনিধি: রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় এক বছর ধরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে ব্যবহৃত ‘র‍্যাবিস’ টিকার কোনো সরবরাহ নেই। ফলে কুকুর বা বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে এসে প্রতিষেধক না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, অনেকে ঝুঁকি নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসার আশ্রয় নিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসজনিত রোগ, যার প্রতিষেধক কামড়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিতে হয়। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে টিকা না থাকায় অনেকেই নিরুপায় হয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে প্রতিটি টিকা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনে নিচ্ছেন। এক পূর্ণাঙ্গ ডোজ নিতে লাগে ৫টি টিকা, যার ব্যয় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। এই খরচ নিম্নআয়ের মানুষের জন্য প্রায় অসম্ভব।

রাউজান সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, আমার মাকে বিড়াল কামড় দেওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে টিকা না থাকায় তারা কাগজে নাম লিখে দিয়ে বাইরের ফার্মেসিতে পাঠায়। বাধ্য হয়ে ৪৫০ টাকা দিয়ে টিকা কিনে মায়ের শরীরে প্রয়োগ করি।

দিনমজুর নুরুল হাকিম বলেন, আমার পায়ে কুকুর কামড় দেয়। হাসপাতালে গেলে তারা বলে টিকা নেই, শহরে যেতে হবে। এক টিকা ফার্মেসি থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে নিই, কিন্তু বাকি ৪টা নেওয়ার সামর্থ্য নেই। পরে ‘কলা পড়া’ নামের ঝাড়ফুঁক খেয়ে নিয়েছি, আল্লাহ যা করেন।

রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত বছর থেকে র‍্যাবিস টিকার সরকারি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমাদের হাতে কিছু মজুদ ছিল, তাও শেষ হয়ে গেছে। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিগত এক বছর ধরে আমাদের এখানে জলাতঙ্কের টিকার সরবরাহ নেই। ৩টা ছিল মজুদ ছিল তা গত মাসে শেষ হয়েছে। আমরা চলতি বছরের ৩ মে ৫০০টি র‍্যাবিজ ভ্যাকসিন ইমোনোগ্লুবুলিন, ৫০০টি র‍্যাবিজ ভ্যাকসিন হিউম্যান বি পি ও ১০ টি ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রারের চাহিদা প্রেরণ করেছি। কিন্ত এখনও আসেনি। সরবরাহ না থাকলে আমরা দিব কিভাবে। আশা করছি শিগগিরই টিকা পাওয়া যাবে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, জলাতঙ্কের ভাইরাস আক্রান্ত প্রাণীর লালা থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। চিকিৎসা না নিলে এই রোগ প্রায় শতভাগ মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তাই কামড় বা আঁচড়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকা গ্রহণ জরুরি।

চাটগাঁ নিউজ/জয়নাল/এমকেএন

Scroll to Top