রাউজানে ৬ দিন ধরে পানিবন্দি হালদাপাড়ের প্রায় ৩০ গ্রাম

রাউজান প্রতিনিধি: কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট খোলায় ৬ দিন ধরে পানিবন্দি হালদা ও কর্ণফুলীর রাউজানের নোয়াপাড়া, উরকিরচর, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরার অংশের ৩০টির অধিক গ্রাম।

এসব গ্রামগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মাঠ-ঘাট, পুকুর-ডোবানদী-নালা, খাল-বিল জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকায় বিনিষ্ট হয়েছে কোটি টাকার ক্ষেত-খামার, পানির নিচের রাস্তা গুলোর চিহ্ন না থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থাও। জোয়ারের তীব্র স্রোতে অনেক পরিবারের চাল চুলা ভেসে গেছে, ভেঙ্গে গিয়েছে অনেক রাস্তাঘাট।

হালদার পাড়া গ্রামের নারী জোহরা বেগম বলেন, আমরা পানির কারণে চুলা জ্বালাতে পারছি না। কয়েকদিন ধরে দুপুরে রান্না হচ্ছে না। উপবাসে দিন কাটাচ্ছি। দিনের বেলা যেমন-তেমন মাঝ রাতে জোয়ারের পানিতে বিছানা ডুবে যায়। ঘুমাতে পারি না। এখনও কেউ আমাদের কোন সহায়তা দেয় নি।

তৈয়ব নামের এক অটোরিকশা চালক বলেন, গত ছয় দিনের জোয়ারের স্রোতে রাস্তাগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কখনও হাঁটু সমান, কখনও কোমর সমান পানিতে ঘর থেকে বের হওয়া সম্ভব হয় না। তাই গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

পশ্চিম নোয়াপাড়া বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, জোয়ারের পানির স্রোতে আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, রোগীকে ডাক্তার বাড়ি নিতে পারছি না।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০-১১ টার দিকে জোয়ারের তালিয়ে যায় গ্রামগুলো। বেলা ২-৩ টার পর ভাটার সময় পানি নেমে যায়। এই সময় পানির বেশ স্রোত দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান রাতেও জোয়ার-ভাটা সময় একই অবস্থা সৃষ্টি হয়। এই সময়গুলো প্রায় প্রতিটি ঘরে মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজ যেতে পারে না। স্থানীয় বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা গুলোতে শিক্ষকরা আসা যাওয়া করতে পারে না। শিশু শিক্ষার্থীদের স্রোতে তালিয়ে যাওয়ার ভয়ে অভিভাবকদের অনেকেই ছেলেদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ বলেন, কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট খুলে দেওয়ার কারণে রাউজানের নোয়াপাড়া, উরকিরচর, বাগোয়ানের বেশকিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এটা আরো কয়েক দিন থাকতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য এক মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্দ দিয়েছি। মাস্টার রোলের মাধ্যমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এছাড়াও আমাদের পক্ষ হতে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। যা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, এই এলাকাগুলোতে স্থায়ীভাবে বন্য নিয়ন্ত্রণে বেড়িবাঁধের প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে। রাউজান অংশে মদুনাঘাট হতে লাম্বুরহাট পর্যন্ত ২১ শত ৬৫ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আগামী একনেকের সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এটা তুলবে। ইনশাআল্লাহ পাশ হলে এই অর্থবছরে রাউজান অংশ কাজ শুরু হবে।

চাটগাঁ নিউজ/জয়নাল/এমকেএন

Scroll to Top