রাউজানে বিএনপির দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ১৫

রাউজান প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি ঘোষণার জেরে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাউজান উপজেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে এবং পরবর্তীতে মুন্সির ঘাটা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, সকাল ১১টার দিকে রাউজান উপজেলা ও পৌরসভার সদ্য নির্বাচিত বিএনপি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন। এরা প্রত্যেকেই বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী। সাক্ষাৎ চলাকালীন সময়ে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে হট্টগোল বাধে। এসময় একটি পক্ষ গোলাম আকবর খন্দকার গ্রুপের কিছু অনুসারীকে ভেতরে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। এই নিয়ে হট্টগোলের সূত্রপাত ঘটে।

সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এলে প্রশাসনিক ভবন চত্ত্বরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের সাথে প্রাথমিকভাবে তর্কাতর্কি, ধাক্কাধাক্কি, মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে উভয় গ্রুপের অনুসারীরা উপজেলা চত্ত্বর হতে পৃথকভাবে মিছিল সহকারে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের মুন্সির ঘাটায় পৌঁছালে উভয় পক্ষে পুনরায় মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হওয়া খবর পাওয়া গেলেও আহতদের সঠিক পরিচয় পাওয়া যায় নি।

এ বিষয়ে রাউজান উপজেলা বিএনপির সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের সাথে প্রোগ্রাম করছিলাম। হঠাৎ কিছু দুষ্কৃতিকারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। হামলায় আমাদের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি জসীম চৌধুরীসহ ১০-১২ জন আহত হয়। তাদের হামলায় নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ায় আহতদের সঠিক তথ্য দিতে পারছি না।

তিনি বলেন, গত ১৭ বছর যারা বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন না, তারাই এই হামলা করেছে। তারা ২৪ ঘন্টা উপজেলা প্রশাসন ঘিরে রাখে। বিএনপির কোন নেতাকর্মী ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের লাঞ্ছিত করা হয়। আমরা আলোচনার মাধ্যমে আইনী পদক্ষেপ নেবো।

এদিকে, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত উত্তর জেলা যুবদলের সহ সভাপতি সাবের সুলতান কাজল বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে তারা পকেট কমিটি করে। সেই পকেট কমিটি স্বৈরাচারী দোসরদের সাথে নিয়ে উপজেলায় আসলে সাধারণ নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানান। এসময় গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীরা সাধারণ নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে শহীদ, নবী, রিয়াদ, রাব্বীসহ ৬ জন আহত হয়।

তিনি আরও বলেন, যারা দীর্ঘ ১৭ বছর রাউজানে আসতে পারে নি, যারা ৩০-৪০টি মামলায় সর্বশান্ত হয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে পকেট কমিটি করায় সাধারণ নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে বদ্ধ পরিকর।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল উপস্থিত হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায় নি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে নি। আজ (বৃহস্পতিবার) ক্যাম্পাসে দুটি অনুষ্ঠান হয়েছে। বিএনপির কিছু নেতাকর্মী সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলেন। এই সময় এসিল্যান্ড, ওসি উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎ শেষ ওরা চলে যায়। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না।

জানা গেছে, বিএনপির একটি গ্রুপের প্রতিবাদে গত ১৮ জানুয়ারি রাউজান উপজেলা ও পৌরসভার পূর্বঘোষিত কাউন্সিল স্থগিত হয়। গত ২০ জানুয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় ১৪ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলার প্যাডে উপজেলা ও পৌরসভার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নাম ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে রাউজান জুড়ে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

চাটগাঁ নিউজ/জয়নাল/এসএ

Scroll to Top