রাউজানে ছোট ভাইদের হাতে বড় ভাই খুন

রাউজান প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক ভাইকে খুনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর পরই বাড়ির সবাই পালিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নুরুল আলম বকুল (৪১) ওই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় প্রকৌশলী। পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাস করেন বলে জানা গেছে।

হত্যাকারীরা হলেন নিহত বকুলের আপন মায়ের পেটের ভাই নাজিম উদ্দিন ও দিদারুল আলম দিদার।

নিহতের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নাসরিন আক্তার লিজা বলেন, আমরা শহর হতে ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। যখন বাড়িতে আসি তখন তারা কেউ ছিল না। আড়াইটার দিকে খাবার খাওয়ার সময় হঠাৎ করে আমার শাশুড়ি, দুই দেবর ও ননদ এসে বলেন, ‘এই বাড়ি আমাদের। আপনারা পাবেন না। ছেড়ে দেন।’ এসময় ননদ মুন্নি বলে উঠেন এটা আমার বাবার সম্পত্তি। তোমরা পাবে না। তখন আমার ভাসুর বলেন, বাবা এখনও জীবিত আছে। বাবাকে ডেকে নিয়ে আস। কে পাবে কে পাবে না তখন বুঝা যাবে। এটার বলার পর তারা লাটি, দা, লোহার রড, কুড়াল দ্বারা আমার স্বামী ও ভাসুরের উপর হামলা চালায়। আমার স্বামী পালিয়ে গেলেও আমার ভাসুরকে তারা মাথায় কুপিয়ে কুপিয়ে মগজ বের করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

তিনি আরো জানান, বিগত দুই বছর ধরে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য জহির আহমেদ বলেন, নুরুল আলম নামের যিনি নিহত হয়েছেন তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি নুরুল ইসলাম মুছার স্ত্রীর আগের স্বামীর সন্তান। মুছার পরিচয়ে বড় হলেও তিনি মুছার সন্তানদের ভরনপোষণসহ নানাভাবে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। আজ সামান্য সম্পত্তির জন্য তারাই তাকে মেরে ফেলেছে। এই ঘটনাটা হলদিয়ার জন্য কলঙ্কজনক।

স্থানীয় বাসিন্দা প্রকৌশলী ইলিয়াস জানান, নুরুল আলম বকুল আমার কলেজের ছোট ভাই। যে জায়গা-জমি সংক্রান্ত কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটি নুরুল আলম তার বাবার কাছ থেকে কিনে নিয়েছিল। সেখানে বাড়িও নির্মাণ করে। তবে সে শহরে থাকতো। মাঝে মধ্যে আসতো। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার শালিস বৈঠকও হয়েছে। তাতে আমি নিজেও উপস্থিত থেকে মীমাংসা করে দিয়েছি। আজকে দুপুর দুইটার পর আমাকে ফোন করে এ বিষয়ে জানায় নুরুল আলমের ছোট ভাই রাজু। সাথে সাথে আমি থানায় ফোনে জানাই এবং ফাঁড়িতে ফোন দিয়ে এসআই মিজানকে অবগত করি। তারপর তড়িঘড়ে করে এসে শুনি নুরুল আলমকে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।’

রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গ্রামের কিছু জমিজমা নিয়ে নুরুল আলম বকুল ও তার ভাইদের মধ্যে বিরোধ ছিল। ঈদ উপলক্ষ্যে সব ভাই গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে তারা পারিবারিক বৈঠকে বসেছিলেন।ওই বৈঠকে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নুরুল আলমকে তার অপর ভাইয়েরা মিলে মারধর ও দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

ওসি মনিরুল আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে শুনে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখান থেকে হামলায় ব্যবহার করা দা উদ্ধার করা হয়েছে।’

চাটগাঁ নিউজ/জয়নাল/এসএ

Scroll to Top