রাউজানে ইফতারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৩

রাউজান প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ উভয় গ্রুপের অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের পাঁচটি মোটরসাইকেল ।

বুধবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উপজেলার নোয়াজিষপুরের ইউসুফ খাঁর দিঘি এবং বিকাল ৪টায় একই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মদন চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদ মাঠে পৃথক এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত দুইজন হলেন গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী যুবদল কর্মী মো. কাইয়ুম (২৮) এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী যুবদল নেতা গাজী মোরশেদ।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কাইয়ুম কপালে গুলিবিদ্ধ হন এবং কিরিচের কোপ লেগে গাজী মোরশেদের ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। বর্তমানে তারা দুজনই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দুইজনের অবস্থা বেশ আশংকাজনক বলেও জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা চিকদাইর ইউনিয়নের ইফতার মাহফিল হতে ফিরছিল। এসময় ইউসুফ খাঁর দিঘিতে গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীরা তাদের পথ আটকায়। এতে উভয় গ্রুপের মধ্যে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীরা গুলিবর্ষণ ও কিরিচ দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো শুরু করে।

এই সময় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের অনেকেই মোটরসাইকেল ফেলে হয়ে পালিয়ে যায়। তাদের ফেলে যাওয়া পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীরা।

এই সময় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী যুবদল নেতা মোরশেদ, মো. সেকান্দর, মো. বাদশা, মো. ফোরকান আহত হয়। এদের মধ্যে মোরশেদের অবস্থা আশংকাজনক।

এর আগে আজ বুধবার বিকাল ৪টায় নোয়াজিষপুর মদন চৌধুরী জামে মসজিদ মাঠে গোলাম আকবর খন্দকারের আনুসারীরা এক ইফতার মাহফিল আয়োজন করে। এসময় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা ২০-২৫টি মোটর সাইকেল যোগে এসে মাহফিলে হামলা চালায়। এতে ইফতার মাহফিল পণ্ড হয়ে যায়।

এই সময় মো. কাইয়ুম নামের এক যুবদল নেতা গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়াও গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নুরুল হুমায়ুন (২৮), যুবদলের সদস্য মো. রিফাত (২৭), যুবদলের সদস্য সচিব মো. সোহেল, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফোরকান সিকদার (৪৪), বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম আহত হন।

এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে আসার পথে গোলাম আকবর খন্দকারের ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন।

গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী নোয়াজিষপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফোরকান সিকদার বলেন— আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছি। বিকাল ৪ টার দিকে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী সাহবু, ফোরকান, দিদারুল আলম ওয়াহেদী, শেরখান, সিরাজ, ফরিদের নেতৃত্বে অস্ত্রসহ ২০-২৫ মোটরসাইকেল যোগে এসে হামলা চালায়। এসময় আমাদের যুবদল নেতা কাইয়ুমের কপালে তারা গুলি করে। এছাড়া আমাদের নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর করে।

তবে সন্ধ্যায় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের কারা হামলা করেছে তা আমার জানা নেই।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী উত্তর জেলা যুবদল নেতা মো. সেলিম উদ্দিন বলেন— আমরা ইফতার মাহফিল হতে ফেরার পথে গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী ফোরকান সিকদারের নেতৃত্বে ২০-৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আমাদের মোটরসাইকেল বহরে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। তারা আমাদের দিকে এলোপাতারি গুলিবর্ষণ করে এবং কুপিয়ে আমাদের ৪-৫ জনকে মারাত্মক আহত করে।

এদের মধ্যে আমাদের যুবদল নেতা মোরশেদকে ছুরি মেরে তার ভুঁড়ি বের করে দেয়। আমাদের পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং একটি অটোরিকশা ভাংচুর করে। আমরা এই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসা রাউজান থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. নাছির উদ্দীন বলেন— খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখি ৫টি মোটরসাইকেল জ্বলছে। ঘটনাস্থলে কেউ ছিল না। এরপূর্বে বিকাল ৪ টার দিকে ইফতার মাহফিল হামলার ঘটনা ঘটে বলে শুনেছি। বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

চাটগাঁ নিউজ/জয়নাল/জেএইচ

Scroll to Top