যৌতুকবিহীন ঐতিহাসিক বিয়ের সাক্ষী হলো চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘বিয়ে আপনার খরচ আমাদের’ এ স্লোগানে যৌতুকবিহীন বিয়ের ঐতিহাসিক আয়োজনের সাক্ষী হলো চট্টগ্রাম। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর বাকলিয়ার কেভি কনভেনশন হলে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এমন বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের কোনো টাকা খরচ করতে হয়নি। সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছে অ্যাশ ফাউন্ডেশন। এই বিয়ে করতে তাদের মানতে হয়েছে কিছু শর্ত।

সেগুলো হল- কোনো ধরনের যৌতুক নেয়া যাবে না। একই সাথে অতিরিক্ত মোহরানা নেয়া যাবে না। পাশাপাশি ধার্যকৃত মোহরানা নগদে পরিশোধও করতে হবে। এমন প্রতিশ্রুতিতেই বিয়েটি সম্পন্ন হয়েছে। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন ১৬ জন বর-কনে। বিয়ে পড়ালেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার শায়খ আব্দুল হাই মো. সাইফুল্লাহ।

আয়োজনের মধ্যে ছিল- বর ও কনে পক্ষের ১০০ জনের খাবার, বর-কনের সাজসজ্জ্বার খরচ, পাশাপাশি ছিল কক্সবাজারে হানিমুনের প্যাকেজ, ঘরের সামগ্রী, বিভিন্ন আইটেমের আট পদের খাবার। যার সম্পূর্ণ খরচ বহণ করা হয়েছে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। আরও রয়েছে বিয়ের পরে বর-কনের কাউন্সিলিং সেবা।

ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের আয়োজনে অংশ নিতে পেরে বর-করে উভয়ই খুবই উচ্ছ্বসিত বলে জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন- সমাজের যৌতুক প্রথা, দেনমোহরের নামে অতিরিক্ত অর্থ, আপ্যায়ন এই বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে এসে সহজ বিয়ের প্রচলন হওয়া। এতে তারা অত্যন্ত খুশি।

বিয়ে করতে আসা একজন বর জানান, শোকর আলহামদুলিল্লাহ। পার্কে বা যত্রতত্র প্রেম না করে বিয়ে করে ফেলেন। শিক্ষার্থী অবস্থায় ও বিয়ে করা যায়। আমি নিজেও একজন ছাত্র। এই ধরনের আয়োজন চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে গিয়ে সারাদেশে আয়োজন করা গেলে ভালো হয়।

অপর এক বর জানান, বিয়েকে সহজ করার জন্য আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন যে আয়োজনটি করেছে তার জন্য তাদেরকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। এই আয়োজনটি যৌতুকবিহীন এবং সম্পূর্ণ মোহরানা আদায়ের মাধ্যমে হয়েছে। এই আয়োজনের প্রচারণা সাড়া দেশে ছড়িয়ে পড়ুক এই প্রত্যাশা করি। সমাজে বিবাহ সহজ হয়ে উঠুক।

আয়োজনের বিষয়ে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে আমি আমার বিয়ের সময় দেখেছি আমার আত্মীয়-স্বজন অনেকেই বলেছে যৌতুক নয় তারা উপহার দিবে, সেই উপহার নিলে ক্ষতি কী? আমি এর সরাসরি ভুক্তভোগী। যৌতুক প্রথা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে। এটি নিছক কোন বিয়ে নয়, এটি একটি আন্দোলন। আমরা যৌতুক প্রথা চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে চাই।

একজন বাবা তার মেয়েকে জন্ম দেয়ার পর থেকে লালন পালন করে বিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু সেই সময় তার বাবার মুখে হাসি নেই। তার বাবা আমার আপনার কাছে বিয়ের জন্য টাকা খুঁজতে আসতেছে। দেশের কোন বাবা যৌতুকের দায়ে ঋণগ্রস্ত থাকবে না। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে আবারও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সামনের বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে রংপুর বিভাগে। ঐতিহাসিক আয়োজন হিসেবে সেখানে থাকবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান।

চাটগাঁ নিউজ/টিপু/জেএইচ

Scroll to Top