চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : নিয়োগ বিতর্কে মেয়াদের ৪ বছরই আলোচনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। চবির প্রথম এ নারী উপাচার্যের মেয়াদকালে প্রায় সাড়ে ৫০০ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন। উপাচার্য পদে থাকার শেষ দিনেও অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন ৩৭ জনকে।
নতুন উপাচার্য নিয়োগের খবর পাওয়ার পর নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারির আগেই তিনি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে, হল ও দফতরে অন্তত ৩৭ জনকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে বিষয়টি।
গত ১৯ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ব্যাপারে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে আলাদা কোনো নিয়োগ বোর্ড বসানোর প্রয়োজন পড়ে না। রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার পর উপাচার্য তা অনুমোদন দেন। এরপর অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এসব পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা এর বিপরীতে আবেদন করে নিয়োগ স্থায়ী করার সুযোগ পান।
এ সুযোগ নিয়েই সদ্যবিদায়ি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিকভাবে লোকবল নিয়োগ করে আসছিলেন। সর্বশেষ তার শেষ কর্মদিবসেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের মাধ্যমে মোট ৩৭ জনকে বিভিন্ন বিভাগ, হল ও দফতরে নিয়োগ দিয়ে গেছেন তিনি। নতুন উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির আগেই তিনি এসব নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য সদ্যবিদায়ি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নূর আহমদকে একাধিকবার ফোন করা হলে দুজনের কেউই কল রিসিভ করেনি।
তবে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সেলের প্রধান সৈয়দ মনোয়ার আলী বলেন, আমি শুনেছি গতকাল (সোমবার) আর আজ (মঙ্গলবার) মিলে মোট প্রায় ৩৭ জনকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের অর্ডার হয়েছে। তবে আমরা এখনও কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পাইনি। পেলে সেল থেকে সেটা অনুমোদন দেব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সেলের প্রধান মো. ওসমান চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন বলেন, আমরা সিন্ডিকেট থেকে একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম যাতে কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্ত না মেনে তিনি নিজের মনগড়া নিয়োগ দিয়েই গেছেন। সিন্ডিকেটে কমিটি গঠনের ওই তারিখের পর থেকে যত এরকম নিয়োগ হয়েছে প্রত্যেকটাই অবৈধ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের নিয়োগের বিষয়ে বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ হবে। এখন থেকে যারা যোগ্য এবং মেধাবী তারাই নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাবে।
অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, শিরীণ আখতারের সময়ে সিন্ডিকেটের অনুমোদনে ১৩০ জন শিক্ষক এবং ২৩৮ জন কর্মচারী নিয়োগে পেয়েছেন। অপরদিকে কোনোপ্রকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ১১৫ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ৫৭ জন। সর্বমোট ৫৪০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে গেছেন অধ্যাপক শিরীণ আখতার।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ