মুক্ত নাবিকদের পরিবারে খুশির কান্না

আনোয়ারা প্রতিনিধি : অবশেষে সোমালিয়া জলদস্যুর জিম্মি থেকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক মুক্তি পেয়েছে। তারা সকলে সুস্থ আছেন। এ খবরে স্বস্তি ফিরেছে নাবিকদের পরিবারে। ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা৷ যদিও ঈদের আগে নাবিকদের মুক্তির অপেক্ষায় ছিল পরিবারগুলো। ঈদে তাদের কাছে না পেয়ে ঈদের আনন্দ পরিণত হয়েছে বেদনায়।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় মুক্তিপণের টাকা ভর্তি তিনটি ব্যাগ জলদস্যুদের হাতে পৌঁছালে সুস্থ অবস্থায় নাবিকসহ জাহাজটি ছেড়ে দেয় তারা। পরে তাদেরকে উদ্ধার করেন স্পেনের নৌবাহিনী।

আজ রবিবার দুপুরে জলদস্যুদের থেকে মুক্তি পাওয়া আনোয়ারার বাসিন্দা জাহাজের অয়েলার শামসুদ্দিন শিমুলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন তার পরিবার।

এসময় তিনি জানান, আলহামদুলিল্লাহ, দীর্ঘ ৩৪ দিন পর জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি। যেদিন জলদস্যুদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি তখন মনে করেছি স্বজনদের কাছে আর ফিরতে পারব না। জিম্মি হওয়ার পরে জলদস্যুরা অত্যাচার ও নির্যাতন না করলেও দুশ্চিন্তা হয়েছিল বেশি। আল্লাহর রহমতে সবার দোয়ায় ও জাহাজ কোম্পানির প্রচেষ্টায় দ্রুত সময়ে মুক্তি পেয়েছি। এখন অপেক্ষা আছি কখন বাড়িতে গিয়ে মা আর ছোট তিন কন্যার কাছে ফিরব।

এদিকে মো. শামসুদ্দিন শিমুলের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, শামসুদ্দিন শিমুলের মুক্তির খবরে মা, স্ত্রী ও তিন কন্যা আনন্দে ভাসছে। দীর্ঘদিন পরে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। শেষ মুহূর্তে ঈদের আমেজ এসেছে তাদের কাছে।

নাবিক মো. শামসুদ্দিন শিমুলের মা জানান, সন্তানের মুক্তির কথা শুনে মনে শান্তি লাগছে। অনেকদিন দেখেননি একমাত্র সন্তানকে। সন্তানের চিন্তায় ভাল ছিলেন না। আমাদের কাছে ঈদের আনন্দ ছিল বেদনার। আজ সন্তানের সাথে ভিডিও কলে কথা হয়েছে। তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে আসবে বলে আস্বস্থ করেছে।

শিমুলের দ্বিতীয় কন্যা সাইদা বলেন, অনেকদিন পরে আব্বুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছি। অনেক ভাল লাগছে। আব্বু আমাদের কাছে তাড়াতাড়ি আসবে বলেছে।

অন্যদিকে আনোয়ারার বাসিন্দা আরেক নাবিক মো. সাজ্জাদ হোসেনের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, তার মা-বাবা ভাইরাও খুশিতে আত্মহারা।

সাজ্জাদ হোসেনের বাবা মো. গাজু মিয়া বলেন, সন্তানের চিন্তায় তার মা পাগল প্রায়। সন্তানের জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে দোয়া করেছি। পুরো গ্রামের মানুষও দোয়া করেছে। আজ তাদের দোয়ায় আমার সন্তানসহ ২৩ নাবিক মুক্তি পেয়েছে। সকালে সন্তান যখন ফোন দিয়ে বলে আব্বু আমাদেরকে জলদস্যুরা ছেড়ে দিয়েছে। তখন আমার মন শান্তিতে ভরে যায়। এতে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই জাহাজ কোম্পানিকে। তাদের আন্তরিকতায় আমাদের সন্তানরা এত তাড়াতাড়ি মুক্তি পেয়েছে।

জানা যায়, মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ও নাবিকদের নিয়ে নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আরব আমিরাতের দুবাই পৌঁছে সেখান থেকে বিমানে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ বাংলাদেশের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। মাঝপথে সোমালিয়া থেকে প্রায় ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে এডেন উপসাগরে জাহাজটিতে হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় অস্ত্রধারী জলদস্যুরা। এতে ওই জাহাজে ২৩ বাংলাদেশি নাবিক দস্যুদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে।

Scroll to Top