চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইনে চলতি সপ্তাহের সংঘর্ষের সময় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন, তাদের সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদেরও একই পথে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ বুধবার সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বৈঠক সূত্র জানায়, মিয়ানমার তাদের বাহিনীর লোকদের নাফ নদ হয়ে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল। তাতে আপত্তি জানায় বাংলাদেশ। কারণ নাফ নদ দিয়ে ফেরত পাঠানোর সময় আরাকান আর্মি যদি কোনো হামলা চালায়, আর তাতে যদি কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটে, তাহলে তার দায় বাংলাদেশকেও নিতে হবে। বিকল্প পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ তাদের আকাশপথে ফেরত পাঠানোর বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। তাই এখন সমুদ্রপথে তাদের ফেরত পাঠানো হবে বলে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের আকাশপথে ফেরাতে চায় না। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের আশ্রিত লোকজনকে সমুদ্রপথে নেওয়ার বিষয়টি মিয়ানমার সামনে এনেছে। যদিও কিছুদিন আগে একই পরিস্থিতিতে ভারত থেকে আকাশপথে নিজ বাহিনীর লোকজনকে ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছিল মিয়ানমার।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। এর আগে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আশা করা যায়, কয়েক দিনের মধ্যেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে।
বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার বাহিনীর বাংলাদেশের প্রবেশের ধরন যদি বিশ্লেষণ করি, তবে দেখা যাবে, প্রথমে তারা উত্তর দিক থেকে প্রবেশ শুরু করে ধীরে ধীরে দক্ষিণে নেমেছে। যার মানে আরাকান আর্মি উত্তর দিক থেকে জান্তা সরকারের বাহিনীকে চাপাতে চাপাতে দক্ষিণে নামিয়েছে। এ ছাড়া রাখাইনের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশের নিচের দিকের ইতোমধ্যে অনেক স্থান আরাকান আর্মির দখলে। ফলে রাখাইনে থাকা জান্তা সরকারের বাহিনীগুলোর বাংলাদেশে প্রবেশ ছাড়া কোনো উপায় নেই। তারা নাফ নদ দিয়ে ফেরত নেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি বলেন, রাখাইনে থাকা ব্যাটালিয়নগুলোকে খোদ জান্তা সরকার পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলেছে। এখন প্রায় পুরো রাখাইনের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা সরকার।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের ৩২৯ নাগরিককে কীভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে, সেটাই আমাদের আলোচ্য বিষয় ছিল। আলোচনায় মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত যুক্ত ছিলেন। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আজ (বুধবার) তিনি দেখা করেছেন। সেখানে সীমান্তের ঘটনাবলির প্রতিবাদ পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে যারা এখানে আছেন, তাদের কীভাবে ফিরিয়ে নেবে– সেটা জানতে চেয়েছেন তিনি। এখানে যেসব লোক আছেন, তাদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে আমরা তাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আকাশপথে অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম। তারা সমুদ্র দিয়ে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। এসব লোককে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে নিরাপদ এবং দ্রুততম সময়ে করা যায়– সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ