কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ সংঘাতে অস্থির মিয়ানমার সীমান্ত। দেশটির রাখাইন রাজ্যে কয়েক দিন ধরে চলা সশস্ত্র সংঘাত এখন বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পৌঁছেছে। দেশটির সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি) সদস্যদের অনেকেই বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের নিকটবর্তী সীমান্ত চৌকিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আরো ১৪ জন মিয়ানমারের সৈন্য আহত অবস্থায় বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানা গিয়েছে। এর আগে রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে বিজিপির আহত সদস্যসহ ৪৪ জন সীমান্ত অতিক্রম করে এপারে এসে আশ্রয় নেন বলে বিজিবির একটি সূত্র জানায়। এ নিয়ে সর্বমোট ৫৮ জন বিজিপির সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। আহত বিজিপির সদস্যদের উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হেফাজতে আছে।
বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টার শেল এসে সীমান্তের কাছে তুমব্রু কোনার পাড়া, মাঝের পাড়া ও বাজার পাড়ায় পড়েছে। যার কারনে সীমান্তবর্তী ৩ গ্রামের মানুষ আতঙ্কে ঘর ছেড়েছে। তাছাড়া ওপার থেকে আসা গুলি ও মর্টার শেলে ৩ জন আহত এবং কোনার পাড়ার কয়েকটি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন, কোনার পাড়ার বাসিন্দা প্রবীন্দ্র ধর(৫০) তার বাবা জোতিষ্ট ধর এবং রহিমা বেগম( ৪০)। এছাড়া, কোনার পাড়ার আমির হোসেনের ছেলে শামশুল আলম কে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিজিপি বাহিনীর কিছু সদস্য তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্ত লাগুয়া স্কুলগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, সীমান্তে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সীমান্তের দিকে নজর রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সীমান্তের নিরাপত্তার সমস্যায় থাকা পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। সীমান্তের পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে।
চলমান এই সংঘাতে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যদিকে সীমান্তবর্তী ঘুনধুম ইউনিয়নের ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসবিএন