মামলায় ‘উসকানিদাতা’ উদয় কুসুমের নাম নেই, চবিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে সংঘর্ষে সরাসরি উসকানিদাতা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান আবদুর রহিম বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন। আন্দোলনে উস্কানিদাতা উদয় কুসুম বড়ুয়ার বিরুদ্ধে মামলা না করায় ক্যাম্পাসজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

সংঘর্ষের দিন শনিবার (৩১ আগস্ট) চবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের উসকে দেন উদয় কুসুম বড়ুয়া। সংঘর্ষ চলাকালে তিনি জোবরা গ্রামবাসীর উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‌‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের বিচার না হলে জোবরার সমস্ত জনগণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করবো। এর জন্য জীবন গেলে জীবন দেবো। আমার মানের চেয়ে জীবন বড় নয়। এখানে কোনো দল নেই। আমরা এলাকার নাগরিক, আমাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা এক ও অভিন্ন। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ও পেশিশক্তির কাছে আমরা মাথা নত করবো না।’

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের উসকে দিচ্ছেন উদয় বড়ুয়া। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে কটাক্ষ করেন।

এ ঘটনার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সই করা ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ দলের নির্দেশনা অমান্য করে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী প্রতীক সিকদার বলেন, ‘বিএনপির এই নেতা চবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে সরাসরি স্থানীয়দের উসকে দিয়েছিলেন। এই বক্তব্যের কারণে তাকে বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। অথচ চবি প্রশাসন তার নামে মামলা করেনি।’

আরেক শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। আমাদের কিছু ভাই আজও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। অথচ যে ব্যক্তি স্থানীয়দের সঙ্গে এক হয়ে আমাদের আহত করেছেন মামলায় তার নাম নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উদয় কুসুম বড়ুয়ার নামে মামলা করা হয়নি। তবে অজ্ঞাতনামায় অনেকের নাম উল্লেখ আছে। এই সংঘর্ষে বড়ুয়া ভিডিও বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষকে উসকে দিয়েছেন। তার নাম উল্লেখ করে আলাদাভাবে মামলা করা হবে কি-না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা থানায় কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো।’

শনিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটে ভাড়া বাসায় প্রবেশের সময় দারোয়ানের সঙ্গে এক নারী শিক্ষার্থীর বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাকে মারধরের অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী। খবর পেয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা ছুটে গেলে গ্রামবাসীর সঙ্গে মধ্যরাতে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

এর জেরে রোববার (৩১ আগস্ট) সারাদিন দফায় দফায় স্থানীয় ও চবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন বলে নিশ্চিত করেছেন চবি মেডিকেল প্রধান ডা. আবু তৈয়ব।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top